বর্ষাকাল রচনা ক্লাস 2-7

বর্ষাকাল রচনা

বর্ষাকাল রচনা: ১৫০ শব্দ

‘মনে পড়ে সুয়োরানী দুয়োরানীর কথা/ মনে পড়ে অভিমানী কঙ্কাবতীর ব্যথা/তারি সঙ্গে মনে পড়ে মেঘলা দিনের গান/ বিষ্টি পড়ে টাপুর-টুপুর, নদেয় এলো বান।’

আমরা সকলেই পরিচিত ছয়টি ঋতুর সাথে। সেই ছয়টি ঋতুর মধ্যে দ্বিতীয় ঋতু হল বর্ষা। বর্ষা ঋতুই সবথেকে বেশি সুন্দর বৈশিষ্ট্যর। সবথেকে আকর্ষণীয় হল এই ঋতুই। আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস নিয়েই শুরু হয় বর্ষাকাল। আষাঢ় মাস দিয়ে শুরু হয় বর্ষার আগমন, শ্রাবণের মধ্যে পায় পরিপূর্ণতা, ভাদ্রে তার গতি মন্থর আর আশ্বিনে তার বিদায়।

বর্ষার রূপ: বর্ষার আগমনে চারিদিক সবুজ ও সতেজ হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মের প্রখর রোদ থেকে মানুষ, জীব-জন্তু, প্রকৃতি সকলেই রেহাই পায়। নদী- নালা, দিঘি, খাল-বিল, পুকুর সব জলে ভরে যায় । কৃষকের মুখে হাসি ফোটে। নদীতে ঢেউ ওঠে। পাখিরা কোলাহল করে। নদী -নালা, খাল-বিল জলে ভরে যায়। প্রকৃতির এই সুন্দর রূপ এককথায় অনবদ্য। 

বর্ষার ফুল ও ফল: বর্ষায় চারিদিকে পদ্মফুল ফোটে। এছাড়াও শাপলা, কলমি, কদম, গন্ধরাজ, কেতকী, জুঁই, দোলনচাঁপা, কামিনী , হিজল প্রভৃতি ফুল ফোটে। পেয়ারা, আতা, বাতাবি লেবু সহ নানারকম ফল হয়।

উপসংহার: ষড়ঋতুর মধ্যে সুন্দর ঋতু বর্ষা। বর্ষার রূপ, সৌন্দর্য, গন্ধে আর কোনো ঋতুই ধারে কাছে ঘেঁসবে না। বর্ষাকাল আছে বলেই চারিদিকে গাছপালা জন্মায়, জলের সৃষ্টি হয়। বর্ষা অনেক মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। যদি বর্ষাকাল না থাকত, তাহলে চারিদিকে মরুভূমির সৃষ্টি হত। পৃথিবীর বুকে বর্ষাকাল হল নতুন জীবনের আশির্বাদ স্বরূপ। 

তাই তো রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন,
‘গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা/কুলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।/রাশি রাশি ভারা ভারা/ধান কাটা হল সারা/ভরা নদী ক্ষরধারা/খরপরশা-/কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।’

বর্ষাকাল রচনা: ১৫০ শব্দ

‘বর্ষাকাল ত সুখের জন্য নহে, ইহা মঙ্গলের জন্য। বর্ষাকালে উপভোগের বাসনা হয় না, “স্বয়ং”-এর মধ্যে একটা অভাব অনুভব হয়, একটা অনির্দেশ্য বাঞ্ছা জন্মে’।
গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহ থেকে মুক্তি দিতে শান্তির বারিধারা নিয়ে আসে বর্ষাকাল। শুধু প্রাণীজগত নয়, জীবজগৎও মুক্তি পায় এই বর্ষার তারুণ্যে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে পাখি, পশু, চাষি, গাছপালা। তাই সকলের কাছে বর্ষা যেন একটা উৎসব। 

বর্ষার সময়কাল: ঋতুচক্রের দ্বিতীয় ঋতু হল বর্ষাকাল। আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস নিয়ে হয় বর্ষাকাল। 

বর্ষার স্বরূপ: এই সময় আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে। কখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হয়। কখনো আবার টানা চার - পাঁচ দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি হতে থাকে। আবহাওয়া ঠান্ডা ঠান্ডা থাকে, চারিদিকে বৃষ্টি এবং ভেজা মাটির সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এইসময় কখনো জোরে আবার কখনো হালকা দক্ষিণা বাতাস বইতে থাকে। 

বর্ষার ভৌগোলিক কারণ: বর্ষাকালে বৃষ্টি কেন হয়? এর রয়েছে ভৌগোলিক কারণ। গ্রীষ্মকালে মৌসুমী বায়ু বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর উত্তর পূর্ব দিকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প প্রবাহিত হয়। হিমালয়ের গায়ে এগুলো বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটে। 

বর্ষার সুফল: বর্ষাকালে গাছপালা সবুজ ও সতেজ হয়ে ওঠে। চারিদিক ফুল ও ফল, শাকসবজিতে ভরে যায়। রাত্রে ব্যাঙের কলতান শোনা যায়। ময়ূর আনন্দে পেখম মেলে নৃত্য করে। কদম, গন্ধরাজ, কেতকী , জুঁই, দোলনচাঁপা, কামিনী প্রভৃতি ফুলে ভরে ওঠে। বর্ষাকাল চাষীদের উপযুক্ত সময়। ধানের চারা রোয়া হয়, পাট চাষ করা হয়। নদী-নালা জলে ভরে যায়। বর্ষার জলে নদী যৌবন ফিরে পায়। অনেক মাছের আগমন ঘটে। বর্ষার আগমনে জমে থাকা ময়লা আবর্জনা ধুয়ে সাফ হয়ে যায়। 

বর্ষার কুফল: বর্ষাকালে গ্রামের রাস্তা কাদাতে  ভরে যায়। রাস্তায় জল থইথই করে। বেশি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। জল জমে মশার উৎপাত হয়, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ঘরে ঘরে সর্দি- কাশির উপদ্রব দেখা যায়। অনেক জায়গায় নীচু ভূমি হওয়ায় বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ফলে যারা দৈনিক খেটে খায় তাদের অনেক রকম সমস্যার মুখে পড়তে হয়। রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও ঘর বাড়ি ডুবে যায়, খাবার এবং পানীয় জলের সমস্যা দেখা যায়। প্রবল বৃষ্টির কারণে অনেক স্কুল, কলেজ ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। 

উপসংহার: বর্ষা কারোর জীবনে সুন্দর, আবার কারোর জীবনে কুৎসিত। কেউ সুন্দর ভাবে অনুভব করে, আবার কেউ দুঃখে কাটায়, আর বলে যা বর্ষা অনেক হয়েছে এবার তুই বাড়ি ফিরে যা । তাই বলা যায় সবমিলিয়ে বর্ষা সুখ এবং দুঃখ দুটোরই স্মৃতি বহন করে আনে। 

বর্ষাকাল রচনা: ১৫০ শব্দ

ভূমিকা: গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহে দেশভূমি যখন উত্তপ্ত, তখন দেশের মানুষজনকে একটা স্বস্তি, একটা শান্তির শ্বাস দিতেই আকাশের মধ্যে থেকে বারিধারা ঝরঝর করে মাটিতে পড়ে। আর এই ঝড়ঝড় করে পড়া বৃষ্টিই হল বর্ষাকাল। আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস মিলে হয় বর্ষাকাল। বাংলার ছয়টি ঋতুর মধ্যে বর্ষাকাল হল কবিদের প্রিয় ঋতু। কবি মাত্রই ভাবুক এবং সুন্দর এর পূজারী। তাই তো তাঁরা বর্ষাকে আহ্বান করেন। বর্ষার আগমনে খুশি হন। 

‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে, আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে। এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি। নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে।’

বর্ষার ভৌগোলিক কারণ: গ্রীষ্মকালে মৌসুমী বায়ু বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তারপর দেশের  উত্তর পূর্ব অঞ্চলে মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়ে জমা হয় প্রচুর জলীয় বাষ্প। আর এই জলীয় বাষ্প হিমালয়ের গায়ে বায়ু বাধাপ্রাপ্ত হয় এর ফলে বৃষ্টিপাত ঘটে।

বর্ষার আগমন: সাধারণত আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস নিয়ে শুরু হয় বর্ষাকাল। এই দুই মাস নিয়ে বর্ষাকাল হলেও জৈষ্ঠ থেকে শুরু হয়ে আশ্বিন মাস পর্যন্ত বর্ষা স্থায়ী হয়। 

বর্ষার রূপ বৈশিষ্ট্য: বর্ষার জলে গাছপালা সবুজ ও সতেজ হয়। চাষিদের আনন্দ হয়। চাষিরা তাদের জমিতে এবার ভালোভাবে চাষ করতে পারবে, এই ভেবেই তারা আনন্দে মুখরিত। যেখানে যা যাবতীয় ময়লা আবর্জনা রয়েছে সব ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয় এই বর্ষা। চারিদিকে বৃষ্টি এবং ভেজা মাটির সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এইসময় কখনো জোরে আবার কখনো হালকা দক্ষিণা বাতাস বইতে থাকে। বর্ষার  সুন্দর রূপ যে অনুধাবন করতে পেরেছে, সেই আসল প্রকৃতি প্রেমী। কিন্তু একদিকে যেমন এর সুন্দর রূপ রয়েছে, তেমনই রয়েছে এর কুৎসিত রূপও। 

বর্ষার ফুল ও ফল: বর্ষাকালে বেশি সাদা ফুল ফোটে। যেমন- রজনীগন্ধা, মালতিলতা, চালতা, জুঁই, কেয়া, লিলি, করবী, শাপলা, কলমি, কদম, গন্ধরাজ, কেতকী প্রভৃতি। এছাড়াও বর্ষাকালে, আমড়া, পেয়ারা, ডুমুর, কামরাঙ্গা, জামরুল, গাব তাল, আঁশফল, আনারস প্রভৃতি ফল হয়।

বর্ষার সবজি: বর্ষাকালে পালং শাক, মেথি শাক, বেগুন, কুমড়ো, শসা, লাউ, চালকুমড়া, কাঁকরোল, সজনে শাক, পুঁই শাক, পেঁপে প্রভৃতি সবজি পাওয়া যায়। 

বর্ষাকালের প্রাকৃতিক পরিবেশ: বর্ষাকালে আকাশ জুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা যায়। মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি, আবার কখনো খুব জোড়ে জোড়ে বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টির সময়সীমা কখনো একদিন আবার কখনো চার থেকে পাঁচদিন। বৃষ্টির সাথে সাথে জোড়ালো হাওয়া বইতে থাকে। 

বর্ষাকালের অসুবিধা: বর্ষাকাল চাষিদের কাছে খুব আনন্দের হলেও বর্ষার অনেক অসুবিধা রয়েছে। রাস্তাঘাট কাদা হয়ে যায়। পুকুর, নদীর জল অতিরিক্ত হলে, বন্যা দেখা দেয়, ঘরবাড়ি ডুবে যায়। বেশি জলের ফলে জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। বেশি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। জল জমে মশার উৎপাত হয়, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ঘরে ঘরে সর্দি- কাশির উপদ্রব দেখা যায়। নানারকম রোগের সৃষ্টি হয়, টাইফয়েড, আমাশয়, ডায়ারিয়া সহ নানারকমের রোগ দেখা যায়। দৈনিক খেটে খাওয়া মানুষজন বাইরে বেরোতে পারে না। সবজির আকাল পড়ায়, সবজির দাম বাড়তে থাকে, মধ্যবিত্তের কপালে হাত পড়ে। কবির কথায়,

"আইল আষাঢ় মাস লইয়া মেঘের রাণী। নদী নালা বাইয়া আইসে আষাঢ়িয়া পানি ৷/শকুনা নদীতে ঢেউয়ে তালেপার করে।/বাণিজ্য করিতে সাধু যত যাহে দেশান্তরে ৷"

বর্ষাকালের সুবিধা: গ্রামবাংলার অনেক মানুষ বর্ষার উপর নির্ভরশীল। কারণ অনেক চাষীরা বর্ষার জলের আশায় বসে থাকে। এছাড়াও বর্ষার জল জমিতে জমে মাটিকে উর্বর করে তোলে। বর্ষার আগমনে গাছপালা, জীবজন্তু, পশুপাখি সব সতেজ হয়ে ওঠে। শুকিয়ে যাওয়া নদীনালা খাল-বিল  সব জলে ভরে ওঠে। 

উপসংহার: বর্ষার যেমন খারাপ কুৎসিত রূপ আছে, তেমনই রয়েছে সুন্দর রূপ। যার মোহে সকল প্রকৃতি প্রেমী মানুষ মোহে আচ্ছন্ন থাকে। বর্ষা যদি না থাকত, তাহলে অনেক চাষীর ঘরে অন্ন জুটত না, অনেক গরীবের ঘরে অন্ন জুটত না। বর্ষা যদি না থাকত সব মরুভূমিতে পরিণত হত। মানুষের বেঁচে থাকাটাই দূর্মূল্য হয়ে যেত। এছাড়াও বর্ষাকালে প্রচুর মাছের উৎপাদন হয়, তাতে করে মানুষের খাদ্যের অভাব দূর হয়। তাই তো কবি বলেছেন,

‘বসন্ত উদাসীন, গৃহত্যাগী। বর্ষা সংসারী, গৃহী। বসন্ত আমাদের মনকে চারিদিকে বিক্ষিপ্ত করিয়া দেয়, বর্ষা তাহাকে এক স্থানে ঘনীভূত করিয়া রাখে।’

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url