বাংলার উৎসব রচনা: ক্লাস ৫ থেকে ১২ এর জন্য ১০০, ৫০০ ও ৬০০ শব্দে
বাংলার উৎসব রচনা (৬০০ শব্দ) ক্লাস ৯-১২ এর জন্য
এই বিভাগে আমরা বাংলার প্রধান ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসবগুলির বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে পড়বো। এছাড়া এইসমস্ত উৎসবের তাৎপর্য ও বিশ্লেষণ করা হবে । রইল নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাংলার উৎসব রচনা।
ভূমিকা:
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। প্রত্যেক মাসে প্রত্যেক সপ্তাহেই রয়েছে উৎসব। উৎসবের কোনো শেষ নেই। বাংলা ক্যালেন্ডার যদি দেখা যায়, তাহলে দেখা যাবে প্রত্যেকটা দিনই উৎসব। তাই তো কবি ঈশ্বর গুপ্ত বলেছেন, ‘এত বঙ্গ ভঙ্গ দেশ তবু রঙ্গে ভরা’।
উৎসব কী:
উৎসব মানে হইহুল্লোড়, আনন্দ, উচ্ছাসে ভরপুর অভিব্যক্তি। উৎসবের মাধ্যমেই আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য জাগ্রত হয়। উৎসবের মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে ভাতৃত্ববোধ, সহধর্মিতা, সহমর্মিতা জেগে ওঠে। যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ একসাথে আনন্দে সামিল হন, সেটাই হল উৎসব। কবি বলেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, ‘আমার আনন্দে সকলের আনন্দ হউক, আমার শুভে সকলের শুভ হউক, আমি যাহা পাই তাহা পাঁচজনের সহিত মিলিত হইয়া উপভোগ করি-এই কল্যাণী ইচ্ছাই উৎসবের প্রাণ।’
উৎসবের প্রয়োজনীয়তা:
কেন মানুষ উৎসব করে? উৎসবের প্রয়োজনীয়তাটা কী? উৎসবই মানুষকে পারস্পরিক মিলনে সাহায্য করে। পরস্পরের মধ্যে ভাতৃত্ব বোধ, সৌহার্দ্য বোধ জাগিয়ে তোলে। মানুষের মনের ক্লান্তি দূর করে মানুষকে একটু আনন্দ দেয়। মানুষের সাথে মানুষের মনোমালিন্য দূর করে।
উৎসবের প্রকারভেদ:
বৈশাখের হালখাতা থেকে শুরু করে চৈত্রের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষের উৎসবের শেষ নেই। শুধু বাংলার মাস নয়, ইংরাজী নববর্ষ থেকে শুরু করে খ্রিস্টানদের ক্রিসমাস পর্যন্ত সবই উৎসব পালন করে থাকে বাঙালি।
ধর্মীয় উৎসব:
দুর্গাপুজো:
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব হল দুর্গাপুজো। কথিত আছে, প্রায় সাড়ে তিন শত বছর আগে তাহেরপুরের রাজা কৃষ্ণনারায়ন এই পুজোর প্রচলন করেন। আবার কারোর মতে কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই পুজোর প্রচলন করেন। তবে ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে বড়িশার জমিদার লক্ষীনারায়ণ রায় মজুমদার এই পুজোর প্রচলন করেন। যে-ই প্রচলন করুক, তা নিয়ে এখন আর কেউ মাথা ঘামায়না। বরং সকলেই উৎসব নিয়েই মত্ত থাকেন। পুজোর চারটি দিন সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী সকলেই মাতেন উৎসবে। খাওয়া দাওয়া, হইহুল্লোড় ইত্যাদিতে সবাই ব্যস্ত। যদিও এখন পুজো শুরু হয় তৃতীয়া থেকে। এই উৎসবের সাজ শুরু হয়ে যায় তিনমাস আগে থেকে। প্রত্যেকেই অপেক্ষায় থাকেন এই পুজোর জন্য।
কালিপুজো:
দুর্গা পুজোর পরেই আসে কালিপুজো। এই পুজোতেও বাঙালিরা আনন্দে মাতোয়ারা হন। চারিদিকে আলোর রোশনাই। সকলের বাড়িতেই এই পুজো হয়। তাই প্রত্যেক বাড়িতে দুদিনের জন্য আনন্দ হইহুল্লোড় লেগেই থাকে।
সরস্বতী পুজো:
মাঘ মাসের শুক্লা পক্ষে সবার বাড়িতে এই পুজো হয়। ছোট ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বড় সকলেই এই পুজোতে মাতেন।
এছাড়াও রয়েছে, সরস্বতীপূজা, বিশ্বকর্মাপূজা, মনসাপূজা, ধর্মপূজা, বাসন্তী পূজা, রটন্তী পূজা, অন্নপূর্ণা পূজা,মঙ্গলচন্ডী, বিপত্তারিণী, শিবরাত্রি, বুদ্ধ পূর্ণিমা, জন্মাষ্টমী, গণেশ পূজা, ওনাম , দশেরা, ছট্ পূজা, মহালয়া, রাম নবমী, রথযাত্রা।
মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে, মহরম, ইদ, সবেবরাত, ঈদুল আযহা।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়রা পালন করেন, খ্রিস্টজন্মদিবস, গুড ফ্রাইডে, ইস্টার স্যাটারডে।
জৈন সম্প্রদায়রা পালন করেন মহাবীর জয়ন্তী।
জাতীয় উৎসব:
জাতীয় উৎসব যা জাতীয় ঐক্য সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটায়। যেমন - প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস, গান্ধী জয়ন্তী, নিউ ইয়ার, শিক্ষক দিবস, আম্বেদকরের জন্মদিন, হজরত আলির জন্মদিন, মে দিবস প্রভৃতি।
ঋতু উৎসব:
এই উৎসব নতুন নয়, ষাটের দশক থেকেই এই উৎসবের আনাগোনা। আমাদের ৬ টা ঋতু। সেই ৬ টা ঋতুর মধ্যেই এই উৎসব সীমাবদ্ধ। যেমন - মকর সংক্রান্তি, নববর্ষ, নবান্ন, দোলযাত্রা, ব্রত পার্বণ, বৃক্ষরোপন, বর্ষামঙ্গল, বৈশাখী মেলা, হালখাতা, করম পূজা, মাঘাৎসব প্রভৃতি।
সামাজিক উৎসব:
সামাজিক উৎসবের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়, দৃঢ় হয়। মানুষের সাথে মানুষের, এছাড়াও আত্মীয়ের সাথে, পরিবারের সাথে যে সুন্দর সম্পর্ক সেটা সামাজিক উৎসবে প্রাধান্য পায়। সামাজিক উৎসবের মধ্যে রয়েছে, বিবাহ, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন, জামাইষষ্ঠী, ভাই ফোঁটা, বিবাহবার্ষিকী, সাধভক্ষণ, রাখি বন্ধন ইত্যাদি।
সাংস্কৃতিক উৎসব:
সাংস্কৃতিক উৎসবের মধ্যে পড়ে কোনো মনীষীদের জন্মদিন, মৃত্যুদিন। যেমন নজরুল জয়ন্তী, রবীন্দ্র জয়ন্তী, বিবেকানন্দ জন্মদিন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন।
আঞ্চলিক উৎসব:
অঞ্চল ভিত্তিক যেসব উৎসব হয়, সেটাই হল আঞ্চলিক উৎসব। যেমন টূসু পরব, ভাদু উৎসব, লহরী, পোঙ্গল, ইতু ঠাকুর, চড়ক-গাজন, বনবিবি, পীর ও গাজির উৎসব, শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা প্রভৃতি।
এইসব উৎসবের পাশাপাশি আরও কিছু উৎসব যোগ হয়েছে। যেমন- নারী দিবস, পরিবেশ দিবস, শিশু দিবস, হস্তশিল্প মেলা, মিলন মেলা ইত্যাদি।
উৎসবের সীমাবদ্ধতা
উৎসব যেমন বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়ে, মানুষের ক্লান্তি দূর করেছে। ঠিক তেমনই মানুষের ক্লান্তিও ফিরিয়ে এনেছেন। বর্তমানে উৎসব আছে, উৎসবের থেকে বেশি বেড়ে গেছে হুজুগপ্রিয়তা, উচ্ছৃঙ্খলতা, বহিরঙ্গ বিলাস, কৃত্রিমতা, চাঁদার উৎপাত। অকারণে অর্থ ক্ষয় হয়। উৎসব কী ? সেটা বোঝাতে গিয়ে মানুষ বেশি আল্ট্রা মডার্ন হয়ে যাচ্ছে, মানুষ বেশি ফ্যাশনাবেল হয়ে যাচ্ছে, এতে করে উৎসবের সংজ্ঞাটাই হারিয়ে যাচ্ছে।
উপসংহার
যতই উৎসব নিয়ে বাঙালির তর্ক-বিতর্ক থাকুক না কেন, বাঙালি আজও উৎসব মুখর। তাই তো চারিদিকে এত উৎসব এত আনন্দ এত হইহুল্লোড়।
বাংলার উৎসব সংক্ষিপ্ত রচনা (১০০ শব্দ) ক্লাস ৫-৬ এর জন্য
এই বিভাগে থাকবে বাংলার প্রধান উৎসব গুলি সম্পর্কে অতি সংক্ষিপ্ত আলোচনা। এই রচনা টি ছোটো শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী যা বাংলার উৎসব সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা দেবে। রইল পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাংলার উৎসব রচনা।
ভূমিকা:
প্রাত্যহিক জীবনের গ্লানি - ক্লান্তি দূর করতে যে জিনিসটার প্রয়োজন সেটাই হল উৎসব। মানুষের উৎসব মানুষকে একত্র করে।
উৎসবের শ্রেণীবিভাগ:
উৎসবকে মূলত চার ভাগে ভাগ করা হয়। ১) ধর্মীয় উৎসব, ২) সামাজিক উৎসব, ৩) জাতীয় উৎসব, ৪) ঋতু উৎসব।
ধর্মীয় উৎসব:
- হিন্দুদের দুর্গাপূজা, কালিপূজা, লক্ষীপুজো, সরস্বতী পূজা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে,
- মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে, মহরম, ইদ, সবেবরাত, ঈদুল আযহা।
- খ্রিস্টান সম্প্রদায়রা পালন করেন, খ্রিস্টজন্মদিবস, গুড ফ্রাইডে, ইস্টার স্যাটারডে।
- জৈন সম্প্রদায়রা পালন করেন মহাবীর জয়ন্তী।
- বৌদ্ধ দের বুদ্ধ পূর্ণিমা।
- শিখদের গুরু নানক জয়ন্তী।
সামাজিক উৎসব:
ভাইফোঁটা, জামাই ষষ্ঠী, রাখীবন্ধন, বিবাহ, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন, সাধভক্ষণ, গৃহপ্রবেশ প্রভৃতি।
জাতীয় উৎসব:
প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস, গান্ধী জয়ন্তী, নিউ ইয়ার,, রাম নবমী, গুড ফ্রাইডে, বুদ্ধ পূর্ণিমা, রথ যাত্রা, শিক্ষক দিবস, আম্বেদকরের জন্মদিন, হজরত আলির জন্মদিন, মে দিবস প্রভৃতি।
ঋতু উৎসব:
মকর সংক্রান্তি, নববর্ষ, নবান্ন, দোলযাত্রা, ব্রত পার্বণ, বৃক্ষরোপন, বর্ষামঙ্গল, বৈশাখী মেলা, হালখাতা, করম পূজা, মাঘাৎসব প্রভৃতি।
উপসংহার:
উৎসবের মাধ্যমে বাংলার মানুষ ধনী-দরিদ্র, ধর্ম ভেদাভেদ সব ভুলে যায়। সব ভুলে আনন্দে মেতে ওঠে। একে অপরের মধ্যেকার সব বিবাদ ভুলে যায়।
বাংলার উৎসব রচনা (৫০০ শব্দ) ক্লাস ৭-৮ এর জন্য
এই বিভাগে বাংলার উৎসব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ৫০০ শব্দের মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী রা এই বাংলার উৎসব রচনা টি মুখস্ত করতে পারো।
ভূমিকা:
উৎসব কী? এবং বাঙালির সমাজজীবনে উৎসবের গুরুত্ব কতটা? এই কথাটি বোঝানোর জন্য একটা প্রবাদ বাক্য বহুল প্রচলিত সেটা হল, ‘ বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ’। তবে শুধু তেরোটি নয়, ছৌটো বড় অনেক উৎসবই দেখা যায়। তেরোরও বেশি উৎসব বাঙালি জাতির জীবনে প্রচলিত। মানুষের যতই অভাব হোক, কষ্ট হোক, মহামারী হোক উৎসবে সামিল হতে কেউ পিছুপা হন না। সকলেই উৎসবে মেতে ওঠেন।
উৎসবের শ্রেণীবিভাগ:
উৎসবকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়।
১) ধর্মীয় উৎসব: বাংলায় নানান ধর্মের মানুষ বসবাস করে। ধর্ম আলাদা হলেও, তাদের প্রকৃতি যে একটাই তারা মানুষ। তার প্রমাণ মেলে এই উৎসবের দ্বারা। সব ধর্মের মানুষ সবার ধর্মের উৎসবে মেতে ওঠে। যেমন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা। এই পূজাতে সকল সম্প্রদায়ের মানুষই মেতে ওঠেন। এছাড়াও রয়েছে,
২) সামাজিক বা পারিবারিক উৎসব: মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের সাথে মিলেমিশে থাকতে চায়। তাই তো তারা পরিবারের মধ্যেই আত্মীয় বন্ধু বান্ধব নিয়ে উৎসব করে। সেই উৎসব গুলির মধ্যে পড়ে, ভাইফোঁটা, জামাই ষষ্ঠী, রাখীবন্ধন, বিবাহ, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন, সাধভক্ষণ, গৃহপ্রবেশ প্রভৃতি।
৩) ঋতু উৎসব: বাংলার মানুষ সব জিনিস নিয়েই মাতামাতি করতে ভালোবাসে। সব জিনিস নিয়েই উৎসব করতে ভালোবাসে। তেমনই একটি উৎসব হল ঋতু উৎসব । যেমন - মকর সংক্রান্তি, নববর্ষ, নবান্ন, দোলযাত্রা, ব্রত পার্বণ, বৃক্ষরোপন, বর্ষামঙ্গল ,বৈশাখী মেলা, হালখাতা, করম পূজা , মাঘাৎসব প্রভৃতি।
৪) জাতীয় উৎসব: জাতীয় সংহতি এবং জাতীয় ঐক্যের মিলন ঘটানোই হল জাতীয় উৎসবের মূল লক্ষ্য। জাতীয় উৎসব গুলি হল, প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস, গান্ধী জয়ন্তী, নিউ ইয়ার, রাম নবমী, গুড ফ্রাইডে, বুদ্ধ পূর্ণিমা, রথ যাত্রা, শিক্ষক দিবস, আম্বেদকরের জন্মদিন, হজরত আলির জন্মদিন, মে দিবস প্রভৃতি।
মানবজীবনে উৎসবের প্রয়োজনীয়তা:
উপসংহার
বাঙালি বরাবরই উৎসব প্রিয় জাতি। উৎসবের মধ্যে দিয়েই বাঙালি আরাম খুঁজে পায়, ক্লান্তি দূর করে, আত্মার তৃপ্তি ঘটায়। সেকারণেই তো বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন। তাই তো রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘ প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র, দীন, একাকী কিন্তু উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ, সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ।'