কিভাবে একজন বিমান চালক হওয়া যায়
আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন আমরা কমবেশি সকলেই দেখে থাকি। কিন্তু তার বাস্তব রূপ পায় ক'জনের? আকাশে পাখির মতো উড়ে যাওয়া উড়োজাহাজের প্রতি আমাদের কৌতুহল সেই শৈশব থেকেই। এই কৌতূহলবশতই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে নিজের পেশাকে অনেকে বেছে নেন উড়োজাহাজ চালক হিসেবে। সেই পেশা কিন্তু আর পাঁচটা সাধারণ পেশার মতো নয় এটি যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ও ঝুঁকিপূর্ণ। আজ আমরা বিমান চালকের পেশা সম্পর্কে জেনে নেব বেশ কিছু তথ্য।
এই স্বপ্ন উড়ানের পথ কিন্তু একদমই মসৃণ নয়। বহু সুযোগ সুবিধা পাওয়ার সাথে সাথে একজন বিমান চালকের কাঁধে চেপে যায় গুরুদায়িত্ব। বিমান চালক মূলত দু ধরনের হয়ে থাকেন - অসামরিক বিমান চালক ও ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিমান চালক। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে বাণিজ্যিক বিমান চালক ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিমান চালকের দায়িত্ব, প্রয়োজনীয়তা, লাইসেন্স ও সুবিধা সব ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। ট্রাফিক মনিটরিং ও বাণিজ্যিক বিমান চালকের কাজের মধ্যে পরে। বিমান চালকের ক্ষেত্রে সবথেকে প্রয়োজনীয় হলো উপস্থিত বুদ্ধি। মাঝ আকাশে শতাধিক মানুষের প্রাণ নির্ভর করে তার উপর, অতএব শান্ত থেকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম এমন ব্যক্তি আদর্শ বিমান চালক হতে পারেন।
বাণিজ্যিক বা কমার্শিয়াল বিমান চালক হতে গেলে বেশ কয়েকটি জিনিস মেনে চলার প্রয়োজন রয়েছে। ভারতীয় নাগরিক ব্যতীত কেউ কমার্শিয়াল বিমান চালক হতে পারবেন না। ১৬ বছর বয়স থেকেই শুরু হয়ে যায় বিমান চালনার ট্রেনিং। এর পেশাগত বয়স হিসাবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ১৮ থেকে ৩২ বছর পর্যন্ত। গণিত রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় উচ্চমাধ্যমিকে ৫০ শতাংশ নম্বরের অধিকারীরাই আবেদন করতে পারবেন এই পেশায়। আপনারা হয়তো ভাবছেন শুধু বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী রায় কি তবে এই স্বপ্নের পেশায় সুযোগ পাবেন? নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কলা ও বাণিজ্যিক বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা এই পেশার জন্য উপযুক্ত। তবে আবেদনকারীকে মুক্ত বিদ্যালয় থেকে গণিত ও পদার্থবিদ্যার উপরে পড়াশোনা করে নিতে হবে। ইংরেজি বিষয়ের উপরেও ৫০ শতাংশ নম্বর থাকা আবশ্যক আবেদনকারীর।
দৃষ্টিশক্তি বিমানচালকের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে কমার্শিয়াল বিমানচালক এর পদের জন্য চশমা বা লেন্স ব্যবহারকারীরাও আবেদন করতে পারেন। বেশ কয়েকটি পরীক্ষার বেড়াজাল টোপকেই তবেই অর্জন করা যেতে পারে কমার্শিয়াল বিমান চালকের পেশা। প্রথমে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তার পরবর্তী পর্যায়ের পরীক্ষা হল মৌখিক। মৌখিক ইন্টারভিউ তে উত্তীর্ণ হওয়ার পর শারীরিক স্বাস্থ্যের পরীক্ষা হয়। উক্ত তিনটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই সুযোগ পাওয়া যায় ফ্লায়িং স্কুলে ভর্তি হওয়ার।
ফ্লাইং স্কুলের দু বছরের কোর্সে বিমান সংক্রান্ত সকল বিষয় হাতে-কলমে শেখানো হয়। ট্রেনিংয়ে ৬০ ঘন্টা অতিক্রম করলেই স্টুডেন্ট পাইলট লাইসেন্স হাতে পাওয়া যায়। দ্বিতীয় লাইসেন্স নিয়ে ২১০ ঘন্টার ট্রেনিং সম্পন্ন করলেই পড়ুয়া পাবেন কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স। এই পেশার শুরুতে একজন বিমান চালক প্রতি মাসে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রোজগার করতে পারেন। অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রোজগারের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৬ লক্ষ টাকা প্রতিমাসে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মাথায় রাখা আবশ্যক কি হলো পড়ুয়ার আর্থিক খরচ; যেটি সর্বনিম্ন ২৫ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। অতএব সবদিক বিচার করে আপনি চাইলে এগিয়ে যেতে পারেন আপনার স্বপ্নের আকাশকে ছোঁয়ার জন্য।