স্যার আইজ্যাক নিউটন জীবনী | Sir Isaac Newton Biography in Bengali

Sir Isaac Newton Biography in Bengali

স্যার আইজ্যাক নিউটন এর জীবনী (Sir Isaac Newton Biography in Bengali): এক মহান বিজ্ঞানী, যার কাছে পরিবেশ কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি, বরং পরিবেশকে উপেক্ষা করে তিনি এগিয়ে গেছেন, বাবা মা ছাড়া একাকীত্বের মাধ্যমে একা একাই বড় হয়েছেন, পর্যবেক্ষণ করেছেন পৃথিবীকে। ছিলনা কোনো পিছুটান। শুধুই ছিল সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া। মা চেয়েছিলেন ছেলে কৃষক হোক, কিন্তু ছেলে কৃষক হলেন না, হলেন বৈজ্ঞানিক। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, “প্রকৃতি ছিল নিউটনের কাছে একটি খোলা বইয়ের মতোই, যার পাতাগুলো নিউটন কোনোরকম কষ্ট ছাড়াই পড়তে পারতেন”। 

স্যার আইজ্যাক নিউটন (Sir Isaac Newton) জীবনী

জন্ম (Birthday) ১৬৪২ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর (25th December 1642)।
জন্মস্থান (Place of Birth) ইংল্যান্ডের ল্যাঙ্কশায়ার ।
মাতা (Mother) হ্যানা নিউটন।
জাতীয়তা (Nationality) ব্রিটিশ।
পেশা (Profession) ধর্মতত্ত্ব, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রাকৃতিক দর্শন, এবং আলকেমি।
পরিচিতি লাভের কারণ নিউটনীয় বলবিদ্যা, সর্বজনীন মহাকর্ষ সূত্র, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ক্যালকুলাস, আলোকবিজ্ঞান, দ্বিপদী উপপাদ্য, ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা
সমাধিসৌধ ওয়েস্ট মিনিস্টার এরি।
মৃত্যু (Death) ৩১ মার্চ ১৭২৭ (31st March 1727)

জন্ম

স্যার আইজ্যাক নিউটন, যিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী। ১৬৪২ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের ল্যাঙ্কশায়ার অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। 

পিতা ও মাতা

তিনি ছিলেন পিতা -মাতার একমাত্র সন্তান। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন তাঁর বাবা মারা যায়। অর্থাৎ ভূমিষ্ঠ হওয়ার তিন মাস আগে। তাঁর পিতার নাম ছিল আইজ্যাক নিউটন। মাতা হ্যানা স্বামীর স্মৃতি রক্ষার্থে নাম রাখেন আইজ্যাক নিউটন। নিউটন অপুষ্টিজনিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। এতটাই তিনি রোগা ছিলেন যে, তাঁকে কৌটে ভরে রাখা যেত।নিউটনের যখন তিন বছর বয়স তখন তাঁর মা একটি চার্চের পাদ্রীর সাথে সম্পর্কে জড়ান। তাঁকে দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন। নিউটন দ্বিতীয় বাবাকে সহ্য করতে পারতেন না। তাই তাঁর মা নিউটনকে দিদার কাছে রেখে আসেন। বাবা মা ছাড়া একাকীত্ব ভাবে বড় হয়েছেন নিউটন। তাই তো আপন করে নিয়েছেন প্রকৃতিকে। প্রকৃতির কোণে কোণে ঘুরে বেড়িয়েছেন, আর তাই তো আবিষ্কার করেছিলেন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। 

শিক্ষা জীবন ও কর্মজীবন

নিউটনের স্কুল জীবন শুরু হয় দিদার বাড়ি থেকেই। বাড়ি থেকে মাত্র পাঁচ মাইল দূরে গ্র্যান্থাম্‌-এ ফ্রি গ্রামার স্কুলে পড়াশোনা করেন। কিন্তু তিনি পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেননা। পড়াশোনার থেকে বেশি মনোযোগ ছিল যন্ত্রপাতি নির্মাণে। বায়ুকল, জলঘড়ি, সূর্যঘড়ি ইত্যাদি তৈরি করেন। এরপর ১৬৬১ সালে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে কাকা রেভ অ্যাসকাফের সুপারিশে ভর্তি হন। ১৬৬৫ সালে স্নাতক হন। এরপর ১৬৬৯ সালে ট্রিনিটি কলেজ থেকে মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপরই নিকোলাস, কেপলার, গ্যালিলিওর ধারণা সম্পর্কে অবগত হন। ১৬৬৯ খ্রিষ্টাব্দে গণিতের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন । ১৬৯৬ খ্রিস্টাব্দে সরকারি টাকশালের ওয়ার্ডেন হিসেবে যোগদান করেন।  নিউটনের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় টাকা জাল করা বন্ধ করে দিয়েছিল। ১৭০০ সালে এই পদ ত্যাগ করেন। সেই বছরই লন্ডন ছেড়ে চলে যান। তাঁর বিখ্যাত আবিষ্কার আপেল মাটিতে পড়া। যা পরিচিত মধ্যাকর্ষণ শক্তি নামে। তিনি দিনের বেশিরভাগ সময়ই বাগানের কাছে থাকতেন। সেখানে থাকতে ভালোবাসতেন। ১৭২৬ সালের ফাল্গুন মাসে গ্রামের বাড়ির বাগানে বসে রয়েছেন, আর সেই সময় একটি আপেল মাটিতে পড়ল, তখন নিউটনের মনে হল আপেলটি মাটিতে কেন পড়ল? ওপরেও উঠতে পারত। আর এই ভাবনা থেকেই আবিষ্কার করলেন মধ্যাকর্ষণ শক্তি। 

বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অবদান

  • ১৬৬৫ -৬৬ সাল যখন প্লেগ রোগের সম্ভাবনা দেখা যায় তখন তিনি ফার্মে বসে আবিষ্কার করেন আলোর কণাতত্ত্ব। 
  • তিনি তাঁর বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে নথিভুক্ত করতে লিখেছেন বই, তাঁর সেই বিখ্যাত বইয়ের নাম ‘ প্রিন্সিপিয়া ‘ । এছাড়াও ১৬৮৭ সনে  প্রকাশিত হয় ‘ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা’ (Philosophiae Naturalis Principia Mathematica)। 
  • নিউটন পদার্থের গতি সম্পর্কে তিনটি সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন। 

প্রথম সূত্র

বাহ্যিক বল প্রয়োগ না করলে, স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে অথবা গতিশীল বস্তু চিরকাল সুষম গতিতে সরলরেখায় বা সরল পথে চলতে থাকবে। 

দ্বিতীয় সূত্র

সময়ের সাথে ,কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন সেদিকেই ঘটে। 

তৃতীয় সূত্র

প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। 

মৃত্যু

১৭২৭ সালে ৮৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর তাঁর দেহ ওয়েস্ট মিনিস্টার এরিতে সমাধিস্থ করা হয়। মৃত্যুর আগে নিজের ডাইরিতে লিখে গেছেন, 

“পৃথিবীর মানুষ আমাকে কি ভাবে জানি না কিন্তু নিজের সম্বন্ধে আমি মনে করি আমি একটা ছোট ছেলের মত সাওরের তীরে খেলা করছি আর খুজে ফিরেছি সাধারনের চেয়ে সামান্য আলাদা নুড়ি পাথর বা ঝিনুক খোলা।সামনে আমার পড়ে আছে অনাবিষ্কৃত বিশাল জ্ঞানের সাগর”

নিউটনের বাণী

১) পৃথিবীর এই বিপুল জ্ঞানভাণ্ডারকে জানার ক্ষেত্রে আমি সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে থাকা এক শিশুর মতো, যে শুধু সারাজীবন নুড়িই কুড়িয়ে গেল। সমুদ্রের জলরাশির মতো বিশাল এই জ্ঞান আমার অজানাই থেকে গেল।

২) সত্য সবসময় সহজবোধ্যতার মাঝে পাওয়া যায়। এটি কখনো জটিলতার মাঝে পাওয়া যাবে না।

৩) আমি জানিনা বিশ্ব আমায় কিভাবে মূল্যায়ন করবে। কিন্তু আমার চোখে আমি কেবলই এক ছোট বালক যে সমুদ্র উপকূলে মনের আনন্দে খেলে বেড়িয়েছে আর কখনো কখনো একটু বেশি মসৃণ নুড়ি-পাথর কিংবা সুন্দর ঝিনুক খুঁজে পেয়েছে। এদিকে সত্যের মহাসমুদ্র আমার সামনে অনাবিষ্কৃতই থেকে গেল।

৪) প্রকৃতি সবসময় সহজ কিছুই পছন্দ করে। প্রকৃতি মেকি হতে পারে না।

৫) অভিকর্ষ গ্রহসমূহের গতির বিষয়টি ব্যাখ্যা করে, কিন্তু এটি ব্যাখ্যা করতে পারেনা, কে গ্রহগুলোকে গতিশীল হিসেবে নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করে দিলে। ঈশ্বর সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন এবং যা কিছু ঘটছে বা যা কিছু ঘটা সম্ভব তার সবই তিনি জানেন।

উল্লেখযোগ্য তথ্য

১) ট্রিনিটি কলেজের খরচ মেটানোর জন্য সিনিয়র ছাত্রদের ফাইফরমাশ খাটতে হতো।

২) তাঁর মায়ের প্রতি এতটাই বিতৃষ্ণা ছিল যে  , তিনি কোনোদিন কোনো নারীর সংস্পর্শে আসেননি। 

৩) আইজ্যাক নিউটন ছিলেন খুবই বদমেজাজি একজন মানুষ। মুখে ছিলনা কোনো হাসি। নিজের সমালোচনা কোনোদিনই সহ্য করতে পারতেননা। তাঁর তেমন বন্ধু ছিলেননা।  এমনকি যেসব বন্ধু তাঁর ছিল, তাঁরা যদি তাঁর হয়ে কথা না বলত, তখনই ঝগড়া লেগে যেত। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে ৪৮টি অপরাধ। যার মধ্যে রয়েছে, মা এবং সৎ বাবাকে বাড়িসহ  পুড়িয়ে মারার হুমকি। 

৪) তিনিই প্রথম বিজ্ঞানী, যে বিজ্ঞানীকে স্যার সম্মানে ভূষিত করা হয়। 

৫) নিউটনের মৃত্যুর পর তাঁর দাত ৩৫০০০ ডলারে নিলামে বিক্রি হয়। এটি ছিল পৃথিবীর বিক্রিত দামি দাঁত  । 

৬) নিউটনের অনেক লেখা থেকে জানা যায়, তাঁর বিখ্যাত ফিলোসফার'স স্টোন বা পরশপাথরের প্রতি আকর্ষণ ছিল। তিনি এটার খোঁজ চালিয়েছিলেন। এই পাথর যে ধাতুতে ছোঁয়ানো যায়, সেটাই সোনায় পরিণত হয়। 

৭) তিনি আবিষ্কার করেছেন বাইনমিয়াল থিওরেম Binomial theorem  , কঠিন পদার্থের ঘনত্ব (The method for Calculating the area of curves or the volume of slides), প্রতিফলক টেলিস্কোপ (Reflecting telescope), 

৮) বৈজ্ঞানিক হওয়ার সত্ত্বেও তিনি ঈশ্বর বিশ্বাস করতেন। বাইবেল পড়তেন। 

৯) ১৭০৫ সালে রানী অ্যান নিউটনকে নাইট উপাধি দেন।

১০) পড়াশোনায় তাঁর একদম মনোযোগ ছিলনা, কিন্তু খুব মেধাবী ছিলেন, যে কোনো জটিল অঙ্কের সমাধান এক নিমেষে করে দিতেন। 

১১) নিউটনের আইকিউ ছিল ১৯০। 

স্যার আইজ্যাক নিউটন জীবনী প্রশ্নোত্তর (FAQ)

আইজ্যাক নিউটন কবে ও কোথায় জন্মগ্রহণ করেন ?

১৬৪২ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের ল্যাঙ্কশায়ার অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন।

আইজ্যাক নিউটন এর বাবা ও মায়ের নাম কী ?

বাবা আইজ্যাক নিউটন ও মাতা হ্যানা নিউটন।

আইজ্যাক নিউটন কত খ্রিস্টাব্দে মারা যান ?

১৭২৭ সালে ৮৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

... ...
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url