ড. বি আর আম্বেদকর জীবনী, কেন বিখ্যাত Dr BR Ambedkar Biography

Dr BR Ambedkar Biography in Bengali

জাত-পাত কোনোদিনও বাধার সৃষ্টি করতে পারেনা। চাই মনের অদম্য ইচ্ছাশক্তি। আর সেই ইচ্ছাশক্তি থাকলে জাত-পাত দূরে রেখে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। আর এই সাহসিকতা যিনি দেখিয়েছেন তিনি হলেন ড. বি আর আম্বেদকর (Dr BR Ambedkar। যার কাছে জাত পাত একটা শব্দ মাত্র, এই শব্দকে তুরি মেরে পৌঁছে গেছেন নিজের লক্ষ্যে। আসুন জেনে নিই এই মানুষটার সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্পর্কে।

ড. বি আর আম্বেদকর জীবনী (Dr BR Ambedkar Biography in Bengali)

জন্ম (Birthday) ১৪ই এপ্রিল ১৮৯১ (April 14, 1891)
পুরো নাম (Full Name) ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেদকর। (DR BHIMRAO RAMJI AMBEDKAR)
জন্মস্থান (Place of Birth) মধ্যপ্রদেশ (Madhyapradesh)
পিতা ও মাতা (Parents) রামজী মালোজী শাকপাল ও ভীমাবাই।
ডাকনাম (Nickname) বাবা সাহেব। (Babasaheb)
দাম্পত্য সঙ্গী রমাবাই (১০৯৬) ও সভিতা (১৯৪৮)।
পড়াশোনা এম.এ. (M. A.); পি.এইচ.ডি. (PhD); ডি.এস.সি.(D.Sc.); এল.এল.ডি. (L.L.D); ডি.লিট. (D. Lit), ব্যরিস্টার (আইন) Barrister (Law)
মৃত্যু ৬ই ডিসেম্বর ১৯৫৬। (Decmeber 6, 1956)
মৃত্যু স্থান দিল্লি (Delhi)

জন্ম

১৮৮৩ সালে মধ্য প্রদেশের মোহ অঞ্চলে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন  ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেদকর। 

পিতা ও মাতা

পিতা রামজী মালোজী শাকপাল ছিলেন সেনানিবাসের ভারতীয় সেনা। রামজি সকপাল এবং ভীমা বাই এর 14 সন্তানের মধ্যে কেবলমাত্র তিন পুত্র ও তিন কন্যা জীবিত ছিলেন। 

পড়াশোনা

আম্বেদকর ১৯০৭ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯১২ সালে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯১৫ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯১৭ সালে ডক্টরেট পান।১৯১৮-১৯২০ সাল পর্যন্ত আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। আম্বেদকর জাতিতে ছিল মহর। তিনি নীচু জাত তাই তাঁকে কেউ ছুঁত না। এমনকি বসার জন্য বাড়ি থেকে আসন নিয়ে যেতেন। জল খেতে চাইলে কেউ জল পর্যন্ত দিতনা। বিদ্যালয়ের অপমান সহ্য করেও এগিয়ে গেছেন নিজের লক্ষ্যে। 

কর্মজীবন

প্রথমদিকে প্রাইভেট কোম্পানিতে অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে কাজ করেন। পরে ব্যবসাও করেন। কিন্তু অস্পৃশ্যতার কারণে তিনি সফল হননি। তাই মুম্বইয়ের একটি কলেজে রাজনীতির অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। কলেজে এসেও নীচু জাত নিয়ে বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। আর তাই তিনি অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৩৬ এ Independent Labour Party প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ১৫ টি পদে জয়লাভ করেন। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর আম্বেদকরকে প্রথম আইনমন্ত্রী হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।  তিনি যে আইন রচনা করেন, ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি সেই সংবিধান গোটা ভারতে ঘোষণা করা হয়। এরপর সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। আর সেই থেকেই তিনি ভারতীয় সংবিধানের জনক হিসেবে পরিচিত। 

দাম্পত্য জীবন

বাবাসাহেব আম্বেদকরের প্রথম স্ত্রী ১৯৩৫ এ মারা যান, এরপর আবার বিয়ে করেন ১৯৪৮। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ায় শোকাহত হয়ে পড়েন। আর তখনই শরীরে দেখা যায় একাধিক সমস্যা। অনিদ্রা, সুগার, পায়ে ব্যথার মত সমস্যা।এরপর চিকিৎসার জন্য মুম্বাই যান। সেখানে বিয়ে করেন ডঃ সবিতাকে। সবিতা ছিলেন ব্রাহ্মণ আর আম্বেদকর ছিলেন দলিত। তাই এই বিয়ে নিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। 

বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ

১৯৫৬ সালে ১৪ অক্টোবর ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার দলিত অনুগামীকে নিয়ে তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, “আমি আপনাদের সবাইকে খুব সুনির্দিষ্ট ভাবে বলছি, মানুষ ধর্মের জন্য, ধর্মের জন্য মানুষ নয়। মানুষের মত ব্যবহার পেতে চাইলে ধর্মান্তরিত হোন”। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন। 

মৃত্যু

এই সব কঠোর পরিশ্রমের কারণে ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯৪৮ সাল থেকে ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন, আর তাই ১৯৫৪ সালে শয্যাশায়ী হন দৃষ্টিশক্তি হারান। আর তাই ১৯৫৬ সালের ৬ ই ডিসেম্বর মারা যান। 

পুরস্কার

১৯৯০ সালে ‘ভারত রত্ন’ পুরস্কার পান। 

উল্লেখযোগ্য তথ্য - Unknown Facts about BR Ambedkar

  1. ১৯৫০ সালে বৌদ্ধ ধর্মের দিকে মন দিয়েছিলেন, এ বিষয়ে ১৯৫৫ সালে বৌদ্ধ মহাসভা প্রতিষ্ঠা করেন। 
  2. আম্বেদকরের মৃত্যুর পর, তাঁর স্মৃতিসৌধটি দিল্লির আলিপুর রোডে স্থাপন করা হয়েছে। 
  3. তাঁর আইন ধারা অনুযায়ী, Reserve Bank of India তৈরি করা হয়।
  4. আম্বেদকরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে সারা দেশে সমতা পালন করা হয়। 
  5. ডঃ আম্বেদকর প্রথম ভারতীয় যিনি বিদেশ থেকে ইকোনমিকে ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
  6. সে দলিত বলে, তাঁর থেকে সবাই দূরে থাকত। এমনকি কল খুলে জল খাওয়াও ছিল অপরাধ। ওই কলে হাত দিলে, কলটাও অপবিত্র হয়ে যেত। তাই পিয়ন উঁচু থেকে জল ঢালতে সেই জল খেতে হত। 
  7. দলিতদের জন্য অনেক আন্দোলন করেছেন, তাই তো তাঁকে সকলেই বাবাসাহেব বলে ডাকেন। 
  8. আম্বেদকররা যে পাড়ায় থাকতেন, সেই পাড়ার সকলেই গোঁড়া হিন্দু। আর তাই তাদের কোনো ধোপা কাপড় কেঁচে দিত না, এমনকি নাপিত চুল কেটে দিত না। তাদের করে দিলে উচ্চবর্ণের হিন্দুরা অস্পৃশ্য হয়ে যাবে। 
  9. তাঁরা দলিত বলে শুধুমাত্র উচ্চবর্ণের হিন্দুরা তাদের অচ্ছুৎ ভাবত তা কিন্তু নয়, মুসলমানদের একাংশও অচ্ছুৎ ভাবত। 

বিখ্যাত উক্তি - Quotes of Dr BR Ambedkar

  1. “মানুষ মরণশীল। একই ভাবে মরণশীল চিন্তাভাবনাও। তাই গাছ বড় হতে যেমন জলের প্রয়োজন, তেমনই প্রজ্ঞাপনের প্রয়োজন চিন্তা-ভাবনারও, নইলে দুইয়ের অবলুপ্তি আটকানো সম্ভব নয়।”
  2. “নারীর উন্নয়নই সামাজিক উন্নয়নের মাপকাঠি।”
  3. “কোনও মানুষের মন যদি মুক্ত না হয়, সে ক্ষেত্রে শৃঙ্খলাবদ্ধ না হলেও, দাসত্ব না করলেও, সেই মানুষ কখনও স্বাধীন হতে পারেন না। মন মুক্ত না হলে, জেলে না থেকেও সেই ব্যক্তি আসেল বন্দি। যে ব্যক্তির মন মুক্ত নয়, মারা না গিয়েও মৃতের সমান তিনি। মুক্ত মনই অস্তিত্বের প্রমাণ।”
  4. “জাতপাত ইঁট-কাঠ-পাথরের দেওয়াল বা কাঁটাতারের মতো ভৌত নয়, যা হিন্দুদের সহাবস্থানের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাই সেই দেওয়াল সহজে ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়। জাতপাত হল একটা ভাবনা, মানসিক অবস্থা।”
  5. আমার পরের সময়ে আমার সমাজের কিছু লোক আমার সাথে বেইমানি করবে, কিন্তু কিছু সুশিক্ষিত যুবক আমার আন্দোলনকে অবশ্যই বুঝতে পারবে। এরকম শিক্ষিত যুবকরা নিজেদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যদি নিজের অশিক্ষিত সমাজকে দিক নির্দেশ না করে ও সমাজের জাগরনের কাজ না করে তাহলে তাদের শিক্ষা ব্যর্থ। আর যদি এরকম যুবক আমার সমাজে হয় তাহলে আমার মতো দুর্ভাগ্যপূর্ন লোক আর হবে না।"
  6. "আমি সেই ধর্মকে মানি যেখানে সমতা, স্বতন্ত্রতা, বন্ধুতা আছে।"

ড. বি আর আম্বেদকর জীবনী প্রশ্নোত্তর - Dr BR Ambedkar Biography (FAQ)

বি আর আম্বেদকর কেন বিখ্যাত

ড. বি আর আম্বেদকর সিভিল সার্ভিস, স্কুল ও কলেজে তফসিলি জাতি ও উপজাতির জন্য আলাদাভাবে আসন সংরক্ষণের বাবস্থা করেন ও অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। তিনি ভারতীয় সংবিধানের জনক হিসেবে পরিচিত।

বি আর আম্বেদকর এর পুরো নাম কি

ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেদকর।

আম্বেদকরের জন্ম কবে?

১৪ই এপ্রিল ১৮৯১ সালে।

আম্বেদকরের পিতা ও মাতার নাম কী?

রামজী মালোজী শাকপাল ও ভীমাবাই।

আম্বেদকরের স্ত্রীর নাম কী?

রমাবাই ও সবিতা ।

আম্বেদকরের মৃত্যু হয় কবে?

৬ ডিসেম্বর ১৯৫৬ ।

আম্বেদকরের ডাক নাম কী?

বাবাসাহেব।

... ...

শেষ কথা

আম্বেদকরের সময় যেমন ছিল জাতিতে জাতিতে ভেদাভেদ, বর্তমানেও তা আছে, এখনো তা কমেনি।  আম্বেদকর সেই সময়ে দাঁড়িয়ে সবার বিরুদ্ধে গিয়ে আন্দোলন করেছিলেন। তিনি দেখিয়েছেন জাত দিয়ে মানুষকে বিচার করা যায়না, মানুষের গুণটাই আসল, আর তাই তিনি আজ সবার উপরে। আজ সবার কাছে বাবাসাহেব।

একটা উঁচু বর্ণের হিন্দুর ছেলে আইন প্রণয়ন করতে পারেনি, সেই দলিতদের ছেলে গিয়েই আইন প্রণেতা হলেন, ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী হলেন। আজও দলিতদের পড়তে হয় বিপাকে। তাদের জন্য নির্দিষ্ট কাঠা  রয়েছে। সেই কাটায় তাদের দাঁড়িয়ে পড়তে হয়।

তাদের জন্মে কোনো দোষ নেই, দোষ নেই আচার আচরণে, দোষ শুধু জাত আলাদা হওয়াতে। আজও শোনা যায় ওরা নীচু  জাত, ওরা উঁচু জাত। নীচু জাতে ওই নিয়ম, উঁচু জাতে ওই নিয়ম। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url