স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী | Swami Vivekananda Biography in Bengali
সকলেরই আইডিয়াল মানুষ, তাঁর জন্য সকলেরই রয়েছে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তাঁর আবির্ভাব যেন স্বয়ং ঈশ্বরের আবির্ভাব। তবে তিনি কিন্তু ঈশ্বর মানতেন না। বরং তিনি বলতেন "গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেললে তোমরা স্বর্গের আরও নিকটবর্তী হবে।" বুঝতেই পারছেন কে সেই মহান ব্যক্তি? ওই মহান ব্যক্তি হলেন, স্বামী বিবেকানন্দ। আজ আমরা স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এই পোস্টের মাধ্যমে। তার আগে দেখে নেওয়া যাক স্বামী বিবেকানন্দের সংক্ষিপ্ত জীবনী টি একটি সুন্দর টেবিলের মাধ্যমে।
জন্ম | ১২ জানুয়ারি ১৮৬৩ |
জন্ম নাম | নরেন্দ্রনাথ দত্ত |
পিতা ও মাতা | বিশ্বনাথ দত্ত ও ভুবনেশ্বরী দেবী |
গুরু | রামকৃষ্ণ |
আদি নিবাস | বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমার ডেরেটোনা গ্রাম। |
সন্ন্যাস গ্রহণ | জানুয়ারি ১৮৮৭। |
শিষ্য | সদানন্দ, অশোকানন্দ, বিরজানন্দ, ভগিনী নিবেদিতা, পরমানন্দ, অভয়ানন্দ, আলাসিঙ্গা, পেরুমল। |
বিভিন্ন নাম | বিবিদিসানন্দ, সচ্চিদানন্দ, বিবেকানন্দ। |
মৃত্যু | ৪ জুলাই ১৯০২ |
মৃত্যু স্থান | বেলুড় মঠ, হাওড়া। |
স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী (Swami Vivekananda Biography in Bengali)
১২ জানুয়ারি ১৮৬৩ সালে উত্তর কলকাতার শিমলা বা শিমুলিয়া গ্রামের বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত (স্বামী বিবেকানন্দ)। ছোটোবেলার নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ। তবে আত্মীয় পরিজনের কাছে ‘বিলে’ বা ‘বীরেশ্বর’ নামে তিনি পরিচিত ছিলেন।
তাঁর জন্মদিনটি আমাদের দেশে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়। বিবেকানন্দের জন্ম নিয়ে একটি মিথ প্রচলিত ছিল, ভবতারিণী দেবী শিবের মূর্তির সামনে পুত্রসন্তানের প্রার্থনা করতেন, শৈশব থেকেই বিবেকানন্দের জীবনে অপার্থিব ধ্যান ধারণার লক্ষণ দেখা দিলে, তিনি বিশ্বাস করতেন, স্বয়ং শিবের অবতার রূপে বিবেকানন্দের আবির্ভাব।
স্বামী বিবেকানন্দের পিতা ও মাতা
পিতা বিশ্বনাথ দত্ত ছিলেন সফল সরকারি উকিল। কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী। পিতা একজন হিন্দু হলেও, সব ধর্মের সংস্কৃতি তিনি মানতেন। কিন্তু কর্মের ক্ষেত্রে ইংরেজকে অনুসরণ করতেন। প্রচূর অর্থ উপার্জন করতেন, কিন্তু সঞ্চয় করতেন না, তিনি অনেক দরিদ্র মানুষের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
মাতার নাম ভুবনেশ্বরী দেবী। বিবেকানন্দের আদি বাড়ি ছিল, বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমার ডেরেটোনা গ্রামে। ব্রিটিশ আমলে, তাঁরা কলকাতায় চলে আসেন। প্রথমে গড় গোবিন্দপুরে পরে দেখা যায় সিমলায়।
স্বামী বিবেকানন্দের শৈশব
ছোটোবেলা থেকেই আধ্যাত্মিক দর্শনের প্রতি ছিল তাঁর প্রবল আকর্ষণ। বাবা মার ষষ্ঠ সন্তান ছিলেন বিবেকানন্দ। ছোটো থেকেই জাতপাত নিয়ে ভাবতেন না।
স্বামী বিবেকানন্দের পড়াশোনা
প্রথমে মায়ের কাছে পড়াশোনা, মায়ের কাছে থেকেই প্রথম ইংরেজি শেখেন। তারপর গৃহশিক্ষকের কাছ থেকে পড়াশোনা জীবন শুরু হয়। কলকাতার মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশনে স্কুলে শুরু হয় স্কুল জীবন। এরপর প্রেসিডেন্সি কলেজ ও পরে জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে(বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ) শুরু হয় কলেজ জীবন।
এরপর এখান থেকে ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে এফ.এ. এবং ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে বিএ পাশ করেন।
স্বামী বিবেকানন্দের গুরু
ছোটবেলা থেকেই তিনি মনে করতেন মানুষের সেবা মানেই ঈশ্বর সেবা। তাঁর গুরু ছিলেন শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। 1881 সালে নভেম্বরে কলকাতায় সুরেন মিত্রর বাড়িতে রামকৃষ্ণের সাথে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়। পরে দেখা হয়, দক্ষিণেশ্বরে। আর সেখানেই রামকৃষ্ণকে প্রশ্ন করেন -
এরপর সবকিছু যাচাই করেছিলেন বিবেকানন্দ। আর সেই কারণেই রামকৃষ্ণর ভালো লেগেছিল স্বামী বিবেকানন্দকে। তবে এত সহজেই স্বামীজীকে তিনি দীক্ষা দেননি। তিনি স্বামীজী সহ আরও কয়েকজনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন গেরুয়া বসন। শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর, 1887 সালের জানুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে গেরুয়া ধারণ করেছিলেন স্বামীজি। তখন তাঁর নাম হয়, স্বামী বিবিদিষানন্দ।
স্বামী বিবেকানন্দের রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা
রামকৃষ্ণদেবের দেহত্যাগের পরই তিনি নিজের হাতে এই মিশন তৈরীর উদ্যোগ নেন। 1897 সালে রামকৃষ্ণ মিশন তৈরি হয়। বরানগরের একটি পুরনো ভাঙ্গা বাড়িতে প্রথম এটি তৈরি করা হয়। এরপর 1898 সালে তৈরী হয় বেলুড় মঠ। এরপর 1909 সালে এই মিশন আইনি স্বীকৃতি পায়।
নরেন্দ্রনাথ থেকে স্বামী বিবেকানন্দ হওয়া
1887 সালে নরেন্দ্রনাথ সন্ন্যাস গ্রহণ করেন, তখন তাঁর নাম হয়, স্বামী বিবিদিষানন্দ। তবে শিকাগো ভ্রমণ করার আগে তাঁর নাম ছিল স্বামী বিবিদিষানন্দ। কিন্তু শিকাগো যাওয়ার সময় তাঁর অর্থ ছিল না। আর তাই রাজপুতানার ক্ষেত্রী রাজা আমেরিকা ভ্রমণের পুরো খরচ দিয়ে দেন।
কথিত আছে, এইসময় ক্ষেত্রীর মহারাজার সঙ্গে যখন তাঁর আলাপ হয়, তখন মহারাজা স্বামীজীকে বলেন এই নাম উচ্চারণ করতে দাঁত ভেঙে পড়ে যাবে। আর মহারাজায় তখন স্বামীজীর নতুন নাম দিলেন, স্বামী বিবেকানন্দ।
স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বিশ্বধর্ম সম্মেলন
১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মে আমেরিকা যান, ২৫ জুলাই ভ্যাঙ্কুবরে পৌঁছান। এরপর ট্রেনে করে 30 জুলাই সন্ধ্যায় শিকাগো পৌঁছান। ১৮৯৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর শিকাগোর বিশ্বধর্ম সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এখানে তিনি বলেছিলেন, তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি, “হে ভারত, এই পরানুবাদ, পরানুকরণ, পরামুখাপেক্ষা, এই দসসুলভ দুর্বলতা, এই ঘৃণিত জঘন্য
নিষ্ঠুরতা-এইমাত্র সম্বলে তুমি উচ্চাধিকার লাভ করিবে? এই লজ্জাকর কাপুরুষতাসহায়ে তুমি বীরভোগ্যা স্বাধীনতা লাভ করিবে? হে ভারত, ভুলিও না—তোমার নারীজাতির আদর্শ সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তী; ভুলিও না—তোমার উপাস্য উমানাথ সর্বত্যাগী শঙ্কর; ভুলিও না-তোমার বিবাহ, তোমার ধন, তোমার জীবন ইন্দ্রিয়সুখের-নিজের ব্যক্তিগত সুখের জন্য নহে;
ভুলিও না—তুমি জন্ম হইতেই ‘মায়ের’ জন্য বলিপ্রদত্ত; ভুলিও না―তোমার সমাজ বিরাট মহামায়ার ছায়ামাত্র; ভুলিও না—নীচজাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মূচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই! হে বীর, সাহস অবলম্বন কর; সদর্পে বল—আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই।
বল—মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী, চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই; তুমিও কটিমাত্র-বস্ত্রাবৃত হইয়া, সদর্পে ডাকিয়া বল―ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের সমাজ আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের বারাণসী;
বল ভাই—ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ; আর বল দিন-রাত, ‘হে গৌরীনাথ, হে জগদম্বে, আমায় মনুষ্যত্ব দাও; মা, আমার দুর্বলতা কাপুরুষতা দূর কর, আমায় মানুষ কর।” এই ভাসনে শিকাগোর আর্ট ইনস্টিটিউটে পুরো ২ মিনিট করতালি ধ্বনিত হয়।
ভগিনী নিবেদিতার সঙ্গে সম্পর্ক
ভগিনী নিবেদিতার সঙ্গে স্বামীজীর এক অসাধারণ সম্পর্ক ছিল। স্বামীজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ভারত সেবায় মগ্ন ছিলেন।
ভ্রমণপ্রিয় মানুষ
তিনি সবসময় বলতেন, "মন ও মস্তিষ্কের দ্বন্দ্বে সবসময়ে অনুসরণ করবে মনকে।" আর তাই মনের কথা শুনেই, রামকৃষ্ণদেবের প্রয়াণের 15 দিন পর তারকনাথ ঘোষাল, বাবুরাম ঘোষ, রাখালচন্দ্র ঘোষ এই তিন সঙ্গীকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন ভারত ভ্রমণে। তবে ভ্রমণ করেছেন পায়ে হেঁটে।
খাদ্যরসিক
স্বামীজী খুবই খাদ্যরসিক ছিলেন। তাঁর পছন্দের খাবার ছিল, বিভিন্ন ধরনের মাছের পদ। এছাড়াও পছন্দের ছিল কচুরি। মৃত্যুর দিনেও ভাত আর ইলিশ মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়েছিলেন। শুধু খেতে নয়, রাঁধতেও পারতেন। শিকাগো যাওয়ার আগে, শিষ্যদের পোলাও রান্না করে খাইয়ে ছিলেন। পছন্দের খাবার ছিল চানাচুর, আইসক্রিম।
আর ভালোবাসতেন লঙ্কা, খাবারে মিষ্টি হলে লঙ্কা চিবিয়ে খেতেন। লঙ্কা প্রসঙ্গে একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন বিবেকানন্দ গবেষক, শংকর, তিনি জানান, ‘এই লঙ্কাপ্রীতি প্রচণ্ড অভাবের সময় বিবেকানন্দকে শক্তি দিয়েছে। রামকৃষ্ণর মৃত্যুর পরে বরানগরে সাধনভজনের সময় প্রবল অনটন।
দারিদ্র এমনই যে মুষ্টিভিক্ষা করে এনে তাই ফুটিয়ে একটা কাপড়ের ওপর ঢেলে দেওয়া হত। একটা বাটিতে থাকত লবণ আর লঙ্কার জল। একটু ঝালজল মুখে দিয়ে এক এক গ্রাস ভাত উদরস্থ করা হত।’ স্বামীজি মাংস খেতে ভালোবাসতেন, কিন্তু সেই সময় মাংস খাওয়ার ব্যাপারে ছিল ছুঁতমার্গ।
কিন্তু স্বামীজি এইসবে বিশ্বাস করতেন না, তাই তিনি সবাইকে মাংস খাওয়ালেন, স্বামী অভেদানন্দের কথায়, ‘সে দিন নরেন বলিল, চল আজ তোদের কুসংস্কার ভাঙিয়া দিই। সন্ধ্যার সময় কাশীপুর বাগান হইতে পদব্রজে আমরা নরেনের সঙ্গে বিডন স্ট্রিটে বর্তমানে যেখানে মিনার্ভা থিয়েটার, তাহার নিকটে পীরুর দোকানে উপস্থিত হইলাম।
নরেন ফাউলকারি অর্ডার দিল।… রাত্রে কাশীপুরে ঠাকুর জিজ্ঞাসা করিলেন, কোথায় গিয়েছিলি? আমি বলিলাম কলিকাতার বিডন স্ট্রিটে পীরুর দোকানে।… জানতে চাইলেন, কী খেলি? আমি বলিলাম মুরগির ডালনা। শেষপর্যন্ত ঠাকুর ঈষৎ হাস্য করিয়া বলিলেন, বেশ করেছিস।
কারণ স্বামীজি বলতেন, ‘ঈশ্বর কি তোমাদের মতো আহাম্মক, তিনি কি ফুলের ঘায়ে এতই মূর্চ্ছা যান যে এক টুকরো মাংসে তাঁর দয়ানদীতে চড়া পড়ে যাবে!’
স্বামী বিবেকানন্দের মৃত্যু
রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন, "নরেন যবে বুঝতে পারবে তাঁর কাজ সম্পন্ন হয়েছে, সে নিজে থেকেই চলে যাবেন।" আর ঠিক তাই, তাঁর মৃত্যুর আভাস দিয়েছিলেন, নিবেদিতাকে কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি। এমনকি অভেদানন্দকেও পাঁচ বছর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর কথা। কিন্তু তিনিও বুঝতে পারেননি।
তিনি বারবার বলতেন আমি এমন এক রোগে আক্রান্ত ৪০ বছরের আগেই আমার মৃত্যু হবে। স্বামীজির কথায়, "বুঝলে অভেদানন্দ আমি হয়তো আর পাঁচ ছয়েক বছর বাঁচবো, আমার আত্মা দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে । এত বড় হয়ে যাচ্ছে যে,শরীরের মধ্যে থেকে তাকে আর ধরে রাখা যাচ্ছে না, সে বারে বারে এ শরীর ছেড়ে পালাতে চাইছে ।"
তিনি ৩১টি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এরপর 1902 সালের 4 জুলাই মাত্র 39 বছর বয়সে তিনি দেহত্যাগ করেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, 4 জুলাই বেলুড় মঠে সন্ধ্যা ৭ টার সময় ধ্যানের ঘরে ঢুকলেন, কিছুক্ষণ পর তিনি বলেন, গরম লাগছে, এরপর রাত 9 টা স্বামীজীর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, এরপর বালিশ থেকে মাথা নেমে গেল, মুখে হালকা হাসি, দেহ স্তব্ধ।
মা ভুবনেশ্বরীকে খবর দেওয়া হয়, সেখানে এসে পৌঁছায়, স্বামীজির ভগ্নীপতি, ভাই ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত , নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ। পরের দিন বেলা ৪ টে নাগাদ দাহ করতে নিয়ে যাওয়া হয়। নিবেদিতা এই মৃত্যুতে শোকাহত হন। রুমালে নিয়েছিলেন পায়ের ছাপ। সন্ধ্যা ৬ টায় তাঁর দাহ কাজ সম্পন্ন হয়।
"এমন কাজ করে চলো যে তুমি হাসতে হাসতে মরবে আর জগৎ তোমার জন্য কাঁদবে।"সত্যিই তাই হাসতে হাসতে মারা গেলেন, আর তাঁর মৃত্যু শোকে আজও ভারতবাসী কাঁদে।
স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য
স্বামীজীকে বলা হয়, ধর্ম, ইতিহাস, দর্শন, শিল্প, সামাজিক বিজ্ঞান এবং সাহিত্যের ভাণ্ডার। তাঁর চিন্তাভাবনা তরুণদের অনুপ্রাণিত করে। আর তাই ১২ জানুয়ারি তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে ভারতবর্ষে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৮৪ সালের তৎকালীন ভারত সরকার রাজীব গান্ধী এই দিনটিকে যুব দিবস হিসাবে উদযাপন করার ঘোষণা করেন।
বিবেকানন্দ বিদেশে প্রায়ই সন্ন্যাসীর বেশে ঘুরতেন। একদিন তাঁকে দেখে, এক বিদেশী তাঁর পাগড়ি টেনে ধরে। এই ঘটনায় বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে যান তিনি। এই কর্মকাণ্ডের পর স্বামীজী ইংরেজি ভাষায় তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, এরূপ ব্যবহারের কারণ কী? একজন গেরুয়া বসনের পোশাক পরিহিত মানুষের মুখে ইংরেজি ভাষা শুনে সেই বিদেশী অবাক হয়ে
জিজ্ঞাসা করেন, আপনি পড়াশোনা জানেন? তখন সেই বিদেশীকে বলেছিলেন হ্যাঁ জানি। তখন বিদেশী উত্তর দিয়েছিলেন, আপনার পোশাক দেখে মনে হয়না তুমি ভদ্রলোক। তখন স্বামীজী উত্তর দিয়েছিলেন, আপনাদের দেশে দর্জি একজন মানুষকে ভদ্রলোক বানায়, কিন্তু আমাদের দেশে একজন মানুষের আচরণ ভদ্রলোক বানায়।
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী
“যে রকম বীজ আমরা বুনি, সে রকমই ফসল আমরা পাই। আমরাই আমাদের ভাগ্য তৈরী করি, তার জন্য কাউকে দোষারোপ করার কিছু নেই, কাউকে প্রশংসা করারও কিছু নেই। ”
“সারাদিন চলার পথে যদি কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হও, তাহলে বুঝবে তুমি ভুল পথে চলেছ।”
এটা তো বড় সংক্ষিপ্ত জীবনী, তাঁর জীবনী জানতে গেলে, অবশ্যই পড়তে হবে, অচেনা অজানা বিবেকানন্দ/ শংকর। একবার এক মার্কিন তরুনী বিবেকানন্দকে বিয়ের প্রস্তাব দেন, এর উত্তরে বিবেকানন্দ জানিয়েছিলেন, ‘আপনি বিয়ে করবেন তারপর সন্তান হবে, কিন্তু সেই সন্তান বড় হয়ে জ্ঞানী হবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। এর চেয়ে আপনি আমাকেই সন্তান হিসেবে গ্রহণ করুন। তাহলে আপনি জ্ঞানী সন্তানের মা হয়ে উঠবেন আর আপনার ইচ্ছাও পূর্ণ হবে।’
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্নোত্তর (FAQ)
স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন কবে?
১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই জানুয়ারি
স্বামী বিবেকানন্দের পিতা ও মাতার নাম কি?
স্বামী বিবেকানন্দের পিতার নাম ছিল বিশ্বনাথ দত্ত এবং মাতার নাম ভুবনেশ্বরী দেবী।
স্বামী বিবেকানন্দের আসল নাম কি ছিল?
নরেন্দ্রনাথ দত্ত, তাকে সবাই নরেন বলে ডাকতো।
স্বামী বিবেকানন্দ কবে, কিভাবে মারা গেছিলেন?
সূত্র থেকে জানা যায়, ৪ঠা জুলাই বেলুড় মঠে সন্ধ্যা ৭ টার সময় ধ্যানের ঘরে ঢুকলেন, কিছুক্ষণ পর তিনি বলেন, গরম লাগছে, এরপর রাত 9 টা, স্বামীজীর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, এরপর বালিশ থেকে মাথা নেমে গেল, মুখে হালকা হাসি, দেহ স্তব্ধ।