বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী | Rabindranath Tagore Biography in Bengali
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী (Rabindranath Tagore Biography in Bengali): যাকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয় বাংলা সাহিত্য, যাকে বাদ দেওয়া যায়না কোনোকিছুতে, যিনি সমগ্র বিশ্বে বিরাজমান তিনিই হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যেন দ্বিতীয় পৃথিবী। শুধু সাহিত্য কেন, বিজ্ঞান, আধুনিকতা সবেতেই রয়েছে তাঁর ব্যপ্তি। দ্বিতীয় পৃথিবী বলেই এটা সম্ভব। আসুন জেনে নেওয়া যাক তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী - Rabindranath Tagore Biography in Bengali
- জন্ম :- ৭ মে ১৮৬১, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি।
- মৃত্যু :- ৭ আগস্ট ১৯৪১ (বয়স ৮০) জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি।
- ছদ্মনাম :- ভানুসিংহ ঠাকুর।
- পিতা ও মাতা :- পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর । মাতা সারদা দেবী।
- দাম্পত্যসঙ্গী :- মৃণালিনী দেবী ( ১৮৮৩–১৯০২)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম
১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ শে বৈশাখ দুপুর ২টা ২৭ মিনিট ৪১ সেকেন্ডে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘরে জন্ম নেয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ০৭-০৫-১৮৬১। জন্ম ছক অনুযায়ী মীন লগ্ন, মীন রাশি, রেবতী নক্ষত্র। তাঁর জন্ম কুন্ডলীতেই লেখা ছিল, প্রবল যশ-খ্যাতি এবং মানসিক যন্ত্রনা।
জন্মস্থান সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, "আমি জন্ম নিয়েছিলুম সেকেলে কলকাতায়। শহরে শ্যাকরাগাড়ি ছুটছে তখন ছড়ছড় করে ধুলো উড়িয়ে, দড়ির চাবুক পড়ছে হাড়-বের করা ঘোড়ার পিঠে। না ছিল ট্রাম, না ছিল বাস, না ছিল মোটরগাড়ি। তখন কাজের এত বেশি হাঁসফাঁসানি ছিল না, রয়ে বসে দিন চলত।
বাবুরা আপিসে যেতেন কষে তামাক টেনে নিয়ে পান চিবোতে চিবোতে, কেউ বা পালকি চড়ে কেউ বা ভাগের গাড়িতে।"
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা ও মাতা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর । মাতা সারদা দেবী। পিতামহ ছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর । দ্বারকানাথ ছিলেন রামমণি এবং মেনকা দেবীর ছোট ছেলে। পাঁচ বছর বয়সে উনার জ্যেঠামশাই রামলোচন তাঁকে দত্তক নেন। আর রামলোচনের সমস্ত সম্পত্তি দ্বারকানাথকে দান করেন।
তৎকালীন এক বিত্তশালী জমিদার ও জনহিতৈষী। দ্বারকানাথ বিবাহ করেন যশোরের রানতনু রায়চৌধুরীর মেয়ে দিগম্বরী দেবীকে। দ্বারকানাথ ঠাকুর- দিগম্বরী দেবীর বড় ছেলে ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। দ্বারকানাথের মৃত্যুর প্রায় ১৫ বছর পর জন্মেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ শৈশবে হারিয়েছেন মাকে।
পিতার কাছেই মানুষ। উত্তর লন্ডনের কেনসাল গ্রিন সেমেট্রিতে দ্বারকানাথের সমাধি ছিল। রবীন্দ্রনাথ প্রায়শই যেতেন লন্ডনে কিন্তু কখনো পিতামহের সমাধির কাছে যাননি। মাতা সারদা ছিলেন যশোরের দক্ষিণডিহি গ্রামের রামনারায়ণ চৌধুরীর মেয়ে। যখন দেবেন্দ্রনাথের সাথে তাঁর বিবাহ হয়, তখন বয়স ছিল মাত্র ৬।
স্বামী ছিলেন রূপবান ও গুণবান। কিন্তু তিন পুত্রের জন্ম দেওয়ার পর ঈশ্বরধ্যানের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েন। কিন্তু যাত্রা মাঝে শুনতে পান পিতার মৃত্যু হয়েছে তাই আর ঈশ্বরধ্যানের উদ্দেশ্যে যাওয়া হয়না। পিতার মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধ হল অপৌত্তলিক মতে। এরপরই আত্মীয় পরিজন সকলেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এই শোক সারদাসুন্দরীর মনে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল। স্বামী দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন মূর্তিপূজার বিরোধী, কিন্তু সারদাসুন্দরী ছিলেন ধর্মপ্রাণ মহিলা। আগে জোড়াসাঁকোয় খুব ধূমধাম করে দুর্গাপূজা ও জগদ্ধাত্রী পূজা হত। দেবেন্দ্রনাথ সেই পূজা তুলে দেন। দূর্গাপূজার সময় বেড়িয়ে পড়তেন দেশ ভ্রমণে।
তবে সারদাসুন্দরী স্বামীর সমস্ত যুক্তি শুনতেন বটে, কিন্তু স্বামীর অজ্ঞাতে অপর লোককে দিয়ে কালীঘাটে ও তারকেশ্বরে পুজো দিয়ে পাঠাতেন। দেবেন্দ্রনাথ বাড়ি থাকলে রান্নাঘরে যেতেন, দেবেন্দ্রনাথের কাছে কাছে থাকতেন। ছেলেরা সব ঘুমিয়ে পড়লে, সুন্দর শাড়ি পড়ে আতর মেখে দেবেন্দ্রনাথের ঘরে যেতেন।
লোক মুখে শোনা যায় ১৫ সন্তানের জননী হলেও, সন্তানদের দিকে সবসময় মনোযোগ দিতে পারতেন না। রবীন্দ্রনাথ সারদা দেবীর প্রসঙ্গে বলেছেন, "মাকে আমরা পাইনি কখনো, তিনি থাকতেন তাঁর ঘরে তক্তাপোশে বসে, খুড়ির সঙ্গে বসে তাস খেলতেন।
আমরা যদি দৈবাৎ গিয়ে পড়তুম সেখানে, চাকররা তাড়াতাড়ি আমাদের সরিয়ে আনতেন, যেন আমরা একটা উৎপাত। মা যে কী জিনিস তা জানলুম কই আর। তাইতো তিনি আমার সাহিত্যে স্থান পেলেন না।" সন্তানদের ব্যাপারে এই ঔদাসীন্য কিন্তু মন থেকে ছিলনা, সরলা দেবী জানিয়েছেন, "সেকালের ধনীগৃহের আর একটি বাঁধা দস্তুর জোড়াসাঁকোয় চলিত ছিল। শিশুরা মাতৃস্তন্যের পরিবর্তে ধাত্রীস্তন্যে পালিত ও পুষ্ট হত।"
এই নিয়ম বলেই সকল সন্তান পালিত হত। রবীন্দ্রনাথের ধাত্রীর নাম ছিল, 'দিগম্বরী' যিনি 'দিগমী' বলে পরিচিত ছিলেন। সারদাসুন্দরী শিক্ষিতা না হলেও, নিরক্ষর ছিলেন না। তিনি পড়তেন বই। তাঁর হাতে সবসময় থাকত চাণক্যশ্লোক। রবীন্দ্রনাথের জননী ১৫ সন্তানের জননী। আর তাইতো বেশিরভাগ সময়ই অসুস্থ থাকতেন।
১৮৭৫-এর ১১ মার্চ মাত্র ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সে চলে গেলেন সারদাসুন্দরী। রবির বয়স তখন তেরো বছর দশ মাস। এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, "প্রভাতে উঠিয়া যখন মা’র মৃত্যুসংবাদ শুনিলাম তখনো সে-কথাটার অর্থ সম্পূর্ণ গ্রহণ করিতে পারিলাম না। বাহিরের বারান্দায় আসিয়া দেখিলাম তাঁহার সুসজ্জিত দেহ প্রাঙ্গণে খাটের উপরে শয়ান। কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর সে-দেহে তাহার কোনো প্রমাণ ছিল না।"
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই বোন
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ১৫ তম সন্তান। প্রথম বোন অল্প বয়সেই মারা যান। তারপর জন্মগ্রহণ করেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর (1840-1926) । এরপর
- দ্বিতীয় জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুর (1841-1869)।
- তৃতীয় সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (1842-1923)।
- চতুর্থ হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর (1844-1884) ।
- পঞ্চম বীরেন্দ্রনাথ ঠাকুর (1845-1915) ।
- ষষ্ঠ সৌদামিনী দেবী( 1847-1920) ।
- সপ্তম জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর (1849-1925)।
- অষ্টম সুকুমারী দেবী (1850) ।
- নবম পূর্ণেন্দ্রনাথ(1851-1887)
- দশম শরৎকুমারী দেবী। (1854-1920)
- একাদশ স্বর্ণকুমারী দেবী।
- দ্বাদশ বর্ণকুমারী দেবী (1858-1922)
- ত্রয়োদশ সোমেন্দ্রনাথ ঠাকুর (1858-1948)
- চতুর্দশ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( 1861-1941)
- পঞ্চদশ বুধেন্দ্রনাথ ঠাকুর (1863-1964)
শিক্ষা জীবন
১৮৬৬ থেকে ১৮৮০ এই চৌদ্দ বৎসরব্যাপী জীবনে মোট ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ নিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ প্রথমে গৃহেই পড়াশোনা করতেন । খগেন্দ্রনাথের লেখা থেকে জানা যায়,‘পাঁচবছর পূর্বেই রবীন্দ্রনাথের বিদ্যাশিক্ষার আরম্ভ। কিন্তু ঠাকুরবাড়ির প্রথা ও বঙ্গদেশের প্রচলিত নীতি অনুসারে শুভদিন দেখিয়ে বাগদেবীর অর্চনাপূর্বক বালককে হাতেখড়ি
ধরান হয় নাই। অন্য কোনো প্রকার আঞ্চলিক অনুষ্ঠানও এই উপলক্ষকে জয়যুক্ত করে নাই।’ ১৮৬৪ তে ৩ বছর ১০ মাস বয়সে রবীন্দ্রনাথ ক্যালকাটা ট্রেনিং স্কুলে ভর্তি হন। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ জানান, ‘তখন নর্মাল স্কুলের একটি শিক্ষক শ্রীযুক্ত নীলকমল ঘোষাল মহাশয় বাড়িতে পড়াইতেন। তাঁহার শরীর ক্ষীণ শুষ্ক ও কন্ঠস্বর তীক্ষ্ম ছিল।
তাঁহাকে মনুষ্যজন্মধারী একটি ছিপছিপে বেতের মত বোধ হইত। সকাল ছয়টা হইতে সকাল নয়টা পর্যন্ত আমাদের শিক্ষাভার তাঁহার উপর ছিল।’ নর্মাল স্কুলের পর ভর্তি হন বেঙ্গল একাডেমিতে। তারপর ভর্তি হন বিদ্যাসাগর স্কুল বা মেট্রোপলিটন স্কুলে। তাঁর সাথে ভর্তি হন সোমেন্দ্র, সত্যপ্রসাদ। কিন্তু এখানেও রবীন্দ্রনাথের পড়ালেখা হলনা।
আর তাই গৃহে শিক্ষক ডেকে শুরু হল পড়ালেখা। জ্ঞানচন্দ্র ভট্রাচার্য ছিলেন তাঁর গৃহশিক্ষক। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘জীবনস্মৃতিতে’ লিখেছেন, ‘ইস্কুলের পড়ায় যখন তিনি কোনোতেই আমাকে বাঁধতে পারলেন না, তখন হাল ছাড়িয়া দিয়া অন্যপথ ধরিলেন।’ এরপর ১৮৬৬ তে রবীন্দ্রনাথ মাধবচন্দ্রের পাঠশালায় পড়াশোনা করেছেন।
তারপর ১৮৬৯-এ ইংরেজী চর্চা। ১৮৭১ এ সংস্কৃতচর্চা। এরপর ১৮৭৫ সালে তিনি ভর্তি হন সেন্ট জেভিয়ার’স স্কুলে। এই স্কুলেও রবীন্দ্রনাথ মানিয়ে নিতে পারেননি। সহপাঠী সোমেন্দ্রনাথ ও সত্যপ্রসাদ এগিয়ে গেলেও, রবীন্দ্রনাথ একই ক্লাসে রয়ে গেলেন। এরপর রবীন্দ্রনাথকে ১৮৭৮ সালে অক্টোবর মাসে রবীন্দ্রনাথকে পড়াশোনার জন্য ইংল্যান্ডের ব্রাইটনে পাঠানো হয়।
সেখানে ১৮৭৯’র ১৩ নভেম্বর University College, London এর Faculty of Arts and Laws তে ইংরেজি শিক্ষার জন্য ভর্তি হন। এখানে মাত্র মাত্র ৩ মাস পড়ে শেষ হয় পড়াশোনার জীবন। আসলে রবীন্দ্রনাথের পছন্দ ছিলনা, এরকম গন্ডিময় পড়াশোনার জীবন। তিনি মাঠে-ঘাটে প্রকৃতির মাধ্যমে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন।
শিক্ষাকে তিনি চাননি পুঁথির মধ্যে রাখতে। আর তাই তো তিনি যখন শান্তিনিকেতনে স্কুল খোলেন। ছাত্রদের খোলা মাঠে শিক্ষা দেন।
রবীন্দ্রনাথের বিয়ে
রবীন্দ্রনাথের বিয়ের ঘটকালি করেছিলেন, তাঁর মায়ের পিসিমা আদ্যাসুন্দরী। জোড়াসাঁকোর জমিদারি সেরেস্তার কর্মচারী বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীকে রবীন্দ্রনাথের জন্য পছন্দ করে ২৪ অগ্রহায়ণ, ১২৯০ বঙ্গাব্দ রোববার ইংরেজি ৯ ডিসেম্বর ১৮৮৩ বিবাহ সম্পন্ন হয়। তখন রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল ২২ বছর ৭ মাস ২ দিন।
আর এই দিনই রবীন্দ্রনাথের বড় বোন সৌদামিনী দেবীর স্বামী সারদা প্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় মারা যান। তবে বিয়েটা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের বাড়িতেই। কারণ রবীন্দ্রনাথ চাননি পাত্রীর বাড়ি যেতে। আর তাই পাত্রীপক্ষরা কলকাতায় একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। সেই বাড়ি ভাড়া দেবেন্দ্রনাথ নিজে বহন করেছিলেন।
কবি রবীন্দ্রনাথ নিজের হাতে নিজের বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্র লিখেছিলেন। নীচে তা উল্লেখ করা হল। আগামী রবিবার ২৪ শে অগ্রহায়ণ তারিখে শুভদিনে শুভলগ্নে আমার পরমাত্মীয় শ্রীমান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শুভ বিবাহ হইবেক। আপনি তদুপলক্ষে বৈকালে উক্ত দিবসে ৬নং জোড়াসাঁকোস্থ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভবনে উপস্থিত থাকিয়া
বিবাহাদি সন্দর্শন করিয়া আমাকে এবং আত্মীয়বর্গকে বাধিত করিবেন।
অনুগত
শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল খুলনা অঞ্চলের রীতি অনুযায়ী। অবনীন্দ্রনাথ তাঁর ‘ঘরোয়া’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘গায়ে হলুদ হয়ে গেল। আইবুড়ো ভাত হবে। তখনকার দিনেও বাড়ির কোনো ছেলের গায়ে হলুদ হয়ে গেলেই এ বাড়িতে তাকে নিমন্ত্রণ করে প্রথম আইবুড়ো ভাত খাওয়ানো হতো।
তারপর এ বাড়ি ও বাড়ি চলত কয়েকদিন ধরে আইবুড়ো ভাতের নেমন্তন্ন। মা গায়ে হলুদের পরে রবিকাকাকে আইবুড়ো ভাতের নিমন্ত্রণ করলেন। মা খুব খুশি, একে যশোরের মেয়ে, তায় রবির মা তার সম্পর্কের বোন। খুব ধুমধামে খাওয়ার ব্যবস্থা হলো। রবিকাকা খেতে বসেছেন উপরে, আমার বড় পিসিমা কাদম্বিনী দেবীর ঘরে, সামনে আইবুড়ো ভাত সাজানো হয়েছে- বিরাট আয়োজন।
পিসিমারা রবিকাকাকে ঘিরে বসেছেন,এ আমাদের নিজের চোখে দেখা। রবিকাকা চৌড়দার শাল গায়ে, লাল কী সবুজ রঙের মনে নেই, তবে খুব জমকালো রঙচঙের। বুঝে দেখো, একে রবিকাকা তায়, ওই সাজ, দেখাচ্ছে যেন দিল্লির বাদশা! তখনই তার কবি বলে খ্যাতি, পিসিমারা জিজ্ঞেস করছেন, কী রে বউকে দেখেছিস, পছন্দ হয়েছে?
কেমন হবে বউ ইত্যাদি সব। রবিকাকা ঘাড় হেঁট করে বসে একটু করে খাবার মুখে দিচ্ছেন। আর লজ্জায় মুখে কথাটি নেই।’ রবীন্দ্রনাথের বিয়ের কথা প্রসঙ্গে হেমলতা দেবী লিখেছেন, ‘ঘরের ছেলে, নিতান্ত সাধারণ ঘরোয়াভাবে রবীন্দ্রনাথের বিয়ে হয়েছিল। ধুমধামের সম্পর্ক ছিল না তার মধ্যে। পারিবারিক বেনারসি-শাল ছিল একখানি, যার যখন বিয়ে হতো
সেইখানি ছিল বরসজ্জার উপকরণ। নিজেরই বাড়িতে পশ্চিমের বারান্দা ঘুরে রবীন্দ্রনাথ বিয়ে করতে এলেন অন্দর মহলে। স্ত্রী আচারের সরঞ্জাম সেখানে সাজানো। বরসজ্জার শালখানি গায়ে জড়ানো। রবীন্দ্রনাথ এসে দাঁড়ালেন পিঁড়ির ওপর। নতুন কাকিমার (কাদম্বরী দেবী) আত্মীয়া যাকে সবাই ডাকতেন ‘বড়ো গাঙ্গুলীর স্ত্রী’ বলে, রবীন্দ্রনাথকে বরণ করলেন
তিনি। তার পরনে ছিল একখানি কালো রঙের বেনারসি জরির ডুরে। কনে এনে সাতপাক ঘোরানো হলো। শেষে বর-কনে দালানে চললেন সম্প্রদান স্থলে। সম্প্রদানের পর বর-কনে এসে বাসরে বসলেন। রবীন্দ্রনাথের বৌ এলে তাঁর থাকবার জন্য একটা ঘর নির্দিষ্ট করা ছিল আগে থেকেই। বাসর বসল সেই ঘরেই।
বাসরে বসেই রবীন্দ্রনাথ দুষ্টুমি আরম্ভ করলেন। ভাঁড়, কুলো খেলা আরম্ভ হলো। রবীন্দ্রনাথ ভাঁড় খেলার বদলে ভাঁড়গুলো উপুড় করে দিতে লাগলেন ধরে ধরে। তাঁর ছোট কাকিমা ত্রিপুরাসুন্দরী বললেন, ‘ও কি করিস রবি, ভাঁড়গুলো সব উল্টেপাল্টে দিচ্ছিস কেন?’ রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘জান না কাকিমা - সব যে উলট-পালট হয়ে যাচ্ছে’ কাকিমা
আবার বললেন, ‘তুই একটা গান কর, তোর বাসরে আর কে গান করবে, তুই এমন গাইয়ে থাকতে?’ রবীন্দ্রনাথ বাসরে গান জুড়ে দিলেন: ‘আ মরি লাবণ্যময়ী কে ও স্থির সৌদামিনী’। ভবতারিণীর নাম বদলে রাখা হয় মৃণালিনী। দাম্পত্য জীবন সুখের হয়নি।
বিয়ের মাত্র ১৮ বছর ১১ মাস ১৪ দিনের মাথায় মৃত্যু হয় মৃণালিনীর। ১৯০২ সালের ২৩শে নভেম্বর মৃত্যু হয়। তখন বয়স ছিল ঊনত্রিশ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে-মেয়ে
উনিশ বছরের বিবাহিত জীবনে পাঁচ সন্তানের পিতা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
- বড় মেয়ে মাধবীলতা (বেলা) (১৮৮৬-১৯১৮)
- রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৮৮-১৯৬১)
- রেনুকা (রানী) (১৮৯০-১৯০৩)
- মীরা অতশী (১৮৯৪-১৯৬৯)
- শমীন্দ্রনাথ (১৮৯৬-১৯০৭)।
বড় মেয়ে বেলার বিয়ে হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের মেধাবী ছাত্র কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর ছেলে শরৎচন্দ্র চক্রবর্তীর সাথে। আষাঢ় মাস ১৩০৮ বঙ্গাব্দ বেলার বিয়ে হয়। ইংরাজীর ১৮৮৬ সালের ২৫শে অক্টোবর। বেলার বয়স ছিল ১৪ বছর।
আর জামাই এর বয়স ছিল উনত্রিশ বছর। বিয়ের সময় দশ হাজার টাকা পণ দিতে হয়। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ দিয়েছিলেন ৫ হাজার, আর রবীন্দ্রনাথ ধার দেনা করে, মৃণালিনী দেবীর গয়না বিক্রি করে দিয়েছিলেন বাকি টাকাটা। শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী পেশায় ছিলেন আইনজ্ঞ।
নিঃসন্তান বেলা ৩১ বছর ৬ মাস বয়সে ১৬ মে ১৯১৮ সালে যক্ষ্মা রোগে মারা যান। বড় মেয়ের পর মাত্র দেড় মাস পর সেজ মেয়ে রেনুকার বিয়ে দেন ডাক্তার সত্যেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সাথে। তখন মেয়ের বয়স ১১। ২২শে শ্রাবণ ১৩০৮ বঙ্গাব্দে বিয়ে হয়।
কিন্তু বিয়ের পর স্বামীর ঘর করতে দেয়নি রবীন্দ্রনাথ। তিনি বলেছিলেন, সত্যেন্দ্রনাথ আমেরিকা থেকে ডিগ্রি নিয়ে ফিরুক তারপর পাঠাবেন। বিয়ের ১ বছর পর রেনুকা যক্ষ্মা রোগে মারা যান। ছোটো মেয়ে মীরা, ডাক নাম অতসী। বরিশালের বাহ্মসমাজের অন্যতম পুরোধা বামন দাশ গাঙ্গুলির পুত্র নগেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলির সাথে ১৯০৭ সালে মীরার বিয়ে হয়।
মীরার তখন বয়স ছিল ১৩। ১৯৬৯ সালে ৭৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । ছেলে রথীন্দ্রনাথের সাথে দিয়েছিলেন বিধবার বিবাহ। ২১ বছর ২ মাস বয়সে ১৯১০ সালের ২৭ জানুয়ারি নীলনাথ মুখোপাধ্যায়ের বিধবা স্ত্রী প্রতিমা দেবীর সাথে বিবাহ দেন।
তাদের কোনো সন্তান ছিলনা। তাই তাঁরা দত্তক নেন, তাঁকে নন্দিনী বলেই ডাকতেন রবীন্দ্রনাথ। ছোটো ছেলে শমীন্দ্রনাথ ১৯০৭ সালের ২৩শে নভেম্বার, মাত্র ১১ বছর বয়সে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
১৯০২ থেকে ১৯০৭ কবি শুধু হারিয়েছেন, হয়েছেন শোকে পাথর।
- ১৯০২– স্ত্রী বিয়োগ
- ১৯০৩– কন্যা রেণুকার মৃত্যু।
- ১৯০৫– পিতা দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যু।
- ১৯০৭ – প্রিয় সন্তান শমীন্দ্রর মৃত্যু।
সাহিত্য জীবন
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য জীবন কটা অক্ষরে বলে শেষ করা যাবে না। তাঁর সাহিত্য জীবন বলতে গেলে একটা উপন্যাস হয়ে যাবে।
- কাব্যগ্রন্থের সংখা ৫২টি।
- নাটক - ৩৮ টি।
- উপন্যাস - ১৩ টি।
- ছোটো গল্প - ৯৫টি।
- প্রবন্ধ ও গদ্য সংকলন - ৩৬টি।
- গানের সংখ্যা ১৯১৫।
প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় মাত্র আট বছর বয়সে ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায়। তবে এর আগে তিনি লিখেছেন একটা ছোট্ট ছড়া, "আমসত্ত্ব দুধে ফেলি/তাহাতে কদলি দলি/সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে/হাপুস হুপুস শব্দ/চারদিক নিস্তব্ধ/পিঁপিঁড়া কান্দিয়া যায় পাতে"।
১৮৭৫ সালে বার্ষিক হিন্দুমেলা উৎসব নিয়ে লেখেন ‘হিন্দুমেলার উপহার’ নামক কবিতা। যা প্রকাশ হয় ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’য়। ১৮৭৭ সালে ‘ভারতী’ পত্রিকায় ছদ্মনামে লিখলেন ‘মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা’, ভানুসিং-ভণিতাযুক্ত রাধাকৃষ্ণ-বিষয়ক কবিতাগুচ্ছ (যা পরবর্তীকালে ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’ নামে
গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়) এবং ‘ভিখারিণী’ ও ‘করুণা’। এই ভিখারিণী হল বাংলা সাহিত্যের প্রথম ছোটো গল্প। ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় ‘কবিকাহিনী’। এটি ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। তারপর একে একে প্রকাশ পায় সন্ধ্যাসঙ্গীত, প্রভাত সঙ্গীত, ছবি ও গান, কড়ি ও কোমল, মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী, কণিকা, কল্পনা, কথা ও কাহিনী, নৈবেদ্য, খেয়া, গীতাঞ্জলি, গীতালি ইত্যাদি ।
এরপর ১৯১২ সালে গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদের জন্য ১৯১৩ তে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি নোবেল পেয়েছিলেন। শুধু কাব্যগ্রন্থ নয়, লিখেছেন উপন্যাস। যেমন- বৌ-ঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩), রাজর্ষি (১৮৮৭), চোখের বালি (১৯০৩), নৌকাডুবি (১৯০৬), প্রজাপতির নির্বন্ধ (১৯০৮), গোরা (১৯১০),
ঘরে বাইরে (১৯১৬), চতুরঙ্গ (১৯১৬), যোগাযোগ (১৯২৯), শেষের কবিতা (১৯২৯), দুই বোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪) ও চার অধ্যায় (১৯৩৪)। উল্লেখযোগ্য ছোটো গল্প গুলি হল, “কঙ্কাল”, “নিশীথে”, “মণিহারা”, “ক্ষুধিত পাষাণ”, “স্ত্রীর পত্র”, “নষ্টনীড়”, “কাবুলিওয়ালা”, “হৈমন্তী”, “দেনাপাওনা”, “মুসলমানীর গল্প” ইত্যাদি।
এছাড়াও রবীন্দ্রনাথের নাটক গুলি হল, শারদোৎসব (১৯০৮), রাজা (১৯১০), ডাকঘর (১৯১২), অচলায়তন (১৯১২), ফাল্গুনী (১৯১৬), মুক্তধারা (১৯২২), রক্তকরবী (১৯২৬), তাসের দেশ (১৯৩৩), কালের যাত্রা (১৯৩২) ইত্যাদি।
কর্মজীবন
১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশরাজ নাইট উপাধি দেন। কিন্তু ১৯১৯ এ জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডে ব্রিটিশ সৈন্যরা ভারতীয়দের নির্মমভাবে হত্যা করলে তিনি ত্যাগ করেন নাইট উপাধি। ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
তাঁর রচিত দুই সঙ্গীত ‘‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে ” এবং ‘‘আমার সোনার বাংলা” ভারত এবং বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে “ডক্টরেট অব লিটারেচার” সন্মানে ভূষিত করেন।
রবীন্দ্রনাথ খাদ্য প্রেমী
রবীন্দ্রনাথ সোনা মুগের ডাল খেতেন, আর ডালটা হতে হবে সজনে ডাঁটা দিয়ে। রবীন্দ্রনাথ এক রান্না পছন্দ করতেন না, তাই খাবারের মধ্যে এনেছিলেন নতুনত্ব। দুপুরের খাবারের পর, ফ্রুট স্যালাড খেতে পছন্দ করতেন। জাপানের চায়ের প্রতি কবিগুরুর আকর্ষণ ছিল। শুধু তাই নয় নিমের সরবতের প্রতি ছিল প্রবল আকর্ষণ।
এছাড়াও আমসত্ত্ব, দুধ ও সন্দেশ 'মাখা' ছিল প্রিয় খাদ্য। এছাড়াও চিকেন কাবাব নোসি, টার্কি কাবাব, সুরতি মিঠা কাবাব, কাঁচা ইলিশের ঝোল, চিতল মাছের মুঠে, নারকেল চিঁড়ি, আদা দিয়ে মাছের ঝোল, ছানার চপ, খাসির মাংস দিয়ে গাছ পাঁঠা ছিল তাঁর পছন্দের।
রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণ
১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে পাঁচটি মহাদেশ ভ্রমণ করেন। তাই নিয়ে লিখেছিলেন ডায়েরী। য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র (১৮৮১), য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি (১৮৯১, ১৮৯৩), জাপান-যাত্রী (১৯১৯), যাত্রী (পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি ও জাভা-যাত্রীর পত্র, ১৯২৯), রাশিয়ার চিঠি (১৯৩১), পারস্যে (১৯৩৬) ও পথের সঞ্চয় (১৯৩৯)।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু
গভীর শারীরিক অসুস্থতায় ভুগেছিলেন শেষ জীবনে। হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি চলছেই কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের কথা বলতে তিনি বলেন, ‘মানুষকে তো মরতেই হবে একদিন। একভাবে না একভাবে এই শরীরের শেষ হতে হবে তো, তা এমনি করেই হোক না শেষ।
মিথ্যে এটাকে কাটাকুটি ছেঁড়াছেঁড়ি করার কি প্রয়োজন?’ কিন্তু শেষপর্যন্ত অস্ত্রোপচার হয়,৩০ জুলাই ঠিক হয়েছিল অস্ত্রোপচার হবে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে জানতে দেওয়া হয়নি। এরপর ৩০ শে জুলাই ১১টা ২০ মিনিটের দিকে শেষ হলো অস্ত্রোপচার। কিন্তু এর জন্য খুব যন্ত্রনা পেয়েছিলেন।
৩১ জুলাই যন্ত্রণা আরও বাড়ল। ১ আগস্ট কথা বলছেন না, ২ আগস্ট কিছু খেতে চাইছেন না। ৪ আগস্ট সকালে চার আউন্সের মত কফি খেলেন। ৫ আগস্ট স্যালাইন দেওয়া হলো। এরপর ৭ ই আগস্ট অর্থাৎ ২২ শে শ্রাবণ দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
উল্লেখযোগ্য তথ্য
- রবীন্দ্রনাথের শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও, তাঁর লিখতে ইচ্ছা করত। কিন্তু তিনি পারেননি। আর তাই তিনি মুখে বলতেন অপর জন লিখে দিতেন।
- ২০০৪ সালে শান্তিনিকেতন থেকে রবীন্দ্রনাথের নোবেল পদকটি চুরি হয়।
- তিনি প্রথাগত শিক্ষার বিরোধী ছিলেন, তিনি কোনোদিন কলেজ যাননি।
- ১৯৩০ থেকে ১৯৩১ সালের মধ্যে আইনস্টাইনের সঙ্গে তিনি দেখা করেন।
- রবীন্দ্রনাথের সবথেকে পছন্দের জায়গা ছিল, সিঁড়ি আর ছাদ। এখানে বসেই তিনি লিখেছেন বহু গান, কবিতা, উপন্যাস।
- রবীন্দ্রনাথ শুধু ভারত আর বাংলাদেশের জন্য গান রচনা করেননি। তিনি রচনা করেছেন শ্রীলঙ্কার জন্য জাতীয় সংগীত। 'নমো নমো শ্রীলঙ্কা মাতা' গানটি রচনা করেন, যার প্রথম লাইন, 'নমো নমো মাতা আপা শ্রীলঙ্কা নমো নমো মাতা, সুন্দর শ্রী বরণী'। ১৯৫১ সালে এটি জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্ল্যানচেট করতেন। একটা সময় রোজ সন্ধ্যায় প্ল্যানচেট করতেন।
- রবীন্দ্রনাথের মিউজিয়াম রয়েছে অনেক জায়গায়, শান্তিনিকেতনের 'রবীন্দ্রভবন', রবীন্দ্রভারতীর অধীনে জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি, কালিম্পংয়ে মংপুতে রয়েছে মিউজিয়াম। এছাড়াও বাংলাদেশে রয়েছে ৫ টি মিউজিয়াম।
- রবীন্দ্রনাথ সবসময় পড়তেন গেরুয়া বা সাদা রঙের জোব্বা আর পায়জামা। আর সভা-সমিতিতে যাওয়ার সময় পড়তেন ধুতি।
- প্রতি দিন ভোর ৪টায় স্নান সেরে পূজা করতেন, তারপর সকাল ৭টা পর্যন্ত একটানা লিখতেন। এরপর সকালের টিফিন খেয়ে বেলা ১১টা পর্যন্ত লিখে স্নান সেরে দুপুরের খাবার খেতেন। খাওয়ার পর বই বা পত্রিকা পড়তেন। এরপর বিকালের খাবার খেতেন ৪ টেয়। ৭টার মধ্যে খেতেন রাতের খাবার। তারপর রাত ১২ টা পর্যন্ত লিখতেন বা পড়তেন। এরপর ঘুমিয়ে পড়তেন।
- রবীন্দ্রনাথ চমৎকার ‘বল ডান্স’ করতে পারতেন। মণিপুরি, কথাকলি, ভরতনাট্টম, শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডিনাচ, জাভার নৃত্যভঙ্গি দেখে তিনি নিজস্ব নৃত্যশৈলীর জন্ম দিয়েছিলেন।
- রবিঠাকুর ১৬ বছরের কিশোর তখন, প্রথম ‘বাল্মিকী প্রতিভা’য় বাল্মিকীর ভূমিকায় অভিনয় করেন।
উপসংহার
এটা একটা সংক্ষিপ্ত জীবনী। রবীন্দ্রনাথের জীবনী সম্পর্কে জানতে রবীন্দ্রনাথের জীবনী বই পড়লে পুরো রবীন্দ্রনাথকে জানা যাবে। প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়ের রবীন্দ্র জীবনী বই বা আরও লেখকের বই পড়লে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে কিছুটা জানা যাবে।