বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী - Bankim Chandra Chattopadhyay in Bengali
Bankim Chandra Chattopadhyay in Bengali: মাথায় লাল পাগড়ি, গায়ে নরম সিল্কের পোশাক, একেবারে যেন সম্রাট। একেবারে সম্রাট বলাটা ভুল, তিনি তো সত্যিই সম্রাট। বিশেষ কোনো রাজ্যের নয়, বিশেষ কোনো জেলার নয়, তিনি গোটা বিশ্বের সম্রাট। তিনি বাংলা সাহিত্যের সম্রাট। যে সময় বাংলা সাহিত্যের দুর্দিন, বাংলা সাহিত্য যখন অবহেলায় নিমজ্জিত সেই নিমজ্জিত অংশ থেকে বাংলা সাহিত্যকে উদ্ধার করে যিনি নতুন রূপ দান করেছেন তিনি হলেন উনিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ঔপন্যাসিক তথা সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় । তিনি একজন বিখ্যাত বাঙালি কবি, লেখক এবং সাংবাদিক ছিলেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর জীবনী
- জন্ম : ২৬ জুন ১৮৩৮ অর্থাৎ ১৩ আষাঢ় ১২৪৫।
- জন্মস্থান : কাঁঠালপাড়া গ্রাম, নৈহাটি।
- মৃত্যু : ৮ এপ্রিল ১৮৯৪ (বয়স ৫৫)।
- পিতা ও মাতা : পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। মাতা দূর্গাদেবী।
- পড়াশোনা : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, হুগলী মহসিন কলেজ, হুগলী কলেজিয়েট স্কুল, মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল।
- পেশা : সরকারি কর্মকর্তা, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক।
- ভাই-বোন : সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
- দাম্পত্যসঙ্গী : মোহিনীদেবী/রাজলক্ষ্মী দেবী।
- প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ললিতা তথা মানস (১৮৫৬)।
- প্রথম উপন্যাস : দূর্গেশনন্দিনী।
জন্ম ও বংশ পরিচয়
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ২৬ শে জুন ১৮৩৮ সালে উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির কাঁঠালপাড়া গ্রামে এক বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু আদি নিবাস ছিল হুগলি জেলার দেশমুখো গ্রামে। বঙ্কিমচন্দ্রের পূর্বপুরুষ রামজীবন চট্টোপাধ্যায় কাঁঠালপাড়ার রঘুদেব ঘোষালের কন্যাকে বিবাহ করেন, রামজীবনের পুত্র রামহরি চট্টোপাধ্যায় মাতামহের সম্পত্তি পেয়ে কাঁঠালপাড়ায় চলে আসেন, এরপর থেকেই তাঁরা এখানে থাকতে শুরু করেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পিতা ও মাতা
পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একজন সরকারি চাকুরীজীবি, তিনি মেদিনীপুরের ডেপুটি কালেক্টর পদে যুক্ত ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের মা তাঁর বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাই-বোন
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দুই ভাই সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যিনি লিখেছেন পালামৌ। বঙ্কিমচন্দ্রের এক দিদি ছিলেন যার নাম নন্দরাণী দেবী।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শৈশব জীবন
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর পিতা-মাতার তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোটো ছিলেন। শৈশব থেকেই প্রখর বুদ্ধি ছিল বঙ্কিমচন্দ্রের। শোনা যায় একদিনে একটা গোটা বর্ণপরিচয় বই মুখস্থ করে ফেলতেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পড়াশোনা
মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই শুরু হয় শিক্ষাজীবন। কুল পুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের কাছে হাতেখড়ি হয়। এরপর ১৮৪৪ এ তাঁর বাবার মেদিনীপুরে বদলি হলে, সেখানে ইংরেজী স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করেন। আবার ১৮৪৯ সালে কাঁঠালপাড়ায় ফিরে আসেন। ফিরে এসে শ্রীরাম ন্যায়বাগীশের কাছে বাংলা এবং সংস্কৃত শিক্ষা গ্রহণ করেন।
এরপর ১৮৪৯ সালে হুগলী কলেজিয়েট স্কুলে ( অধুনা হুগলি মহসিন কলেজ) ভর্তি হন। এখানে ৭ বছর পড়াশোনা করেন। হুগলি কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময় থেকেই কবিতা লিখতে আরম্ভ করেন। এই স্কুলে থেকেই লিখেছিলেন প্রথম কবিতা। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকর এবং সাধুরঞ্জনে গদ্য-পদ্য রচনা করেন।
এরপর এই একই বছরে আইন নিয়ে পড়বার জন্য কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। তখনও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হয়নি। ১৮৫৭ তে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হয়। এরপর ১৮৫৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্টস নিয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন।
১৮৫৮ তে প্রথমবারের মতো বি.এ পরীক্ষা নেওয়া হয়, সেই পরীক্ষায় ১০ জন ছাত্র অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার মধ্যে যদুনাথ বসু ও বঙ্কিমচন্দ্র উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কর্মজীবন
এরপর পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সাব-অর্ডিনেট এক্সিকিউটিভ সার্ভিসে যোগ দেন। দক্ষতার সাথে সরকারি কাজকর্ম নির্বাহ করার জন্য ১৮৯১ সালে ‘রায়বাহাদুর’ এবং ১৮৯৪ সালে ‘Companion of the Most Eminent Order of the Indian Empire’ (CMEOIE) উপাধি প্রদান করে। ১৮৯১ সালে সুদীর্ঘ ২৩ বছরের চাকরি থেকে অবসর নেন। এই বছরেই বিদ্যাসাগরের মৃত্যু হয়।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত জীবন
১৮৪৯ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে বিবাহ করেন মোহিনীদেবীকে। মোহিনীদেবী যখনই বাপের বাড়ি যেতেন, তখন বঙ্কিমচন্দ্র বিরহ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়তেন। আর তাই গোপনে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে মোহিনীকে দেখে আসতেন। মোহিনীর বাড়ি থেকে অনেক গয়না দিয়েছিল, কিন্তু বঙ্কিমের সাধ নিজের টাকায় বৌকে গয়না দেবে, আর তাই স্কলারশিপের টাকায় এক
জোড়া সোনার কানের দুল ও চুলের কাঁটা গড়ে দিয়েছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র তখন চাকরিসূত্রে ছিলেন যশোরে, আর তখনই অর্থাৎ ১৮৫৯ সালে প্রথম স্ত্রী মোহানীদেবী অজানা জ্বরে মারা যান, পরবর্তীতে ১৮৬০ সালের জুন মাসে কলকাতার হালিশহরের মেয়ে রাজলক্ষ্মী দেবীকে বিবাহ করেন ।
রাজলক্ষী দেবীকে অনেক গয়না দিলেও তিনি কখনোই মোহিনীদেবীর সোনার কানের দুল ও চুলের কাঁটা দেননি। রাজলক্ষী দেবীকে বঙ্কিমচন্দ্র বেশ সমীহ করেই চলতেন। তাঁর নির্দেশ মতো রাত ৯ টায় বাড়ি ফিরতে হত। জানা যায় তাঁর রচিত ‘বিষবৃক্ষ’ উপন্যাসের সূর্যমুখী এই রাজলক্ষীর আদলেই গড়া।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যজীবন
তিনি ছিলেন বাংলা উপন্যাসের জনক। আর তাই তাঁকে সাহিত্য সম্রাট বলা হয়। 'কমলাকান্ত' ছদ্মনামে তিনি সাহিত্য রচনা করেন। ১৮৬৪ সালে খুলনা ছেড়ে বারুইপুরে চলে আসেন, চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। আর তখনই তিনি লেখেন, 'Rajmohan's Wife' । এরপর ১৮৬৫ এর মার্চ মাসে প্রকাশিত হয় বাংলা সাহিত্যের
প্রথম উপন্যাস ' দূর্গেশনন্দিনী'। ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসের তিলোত্তমা চরিত্র তাঁর প্রথম স্ত্রী মোহিনীর আদলে গড়া। এরপর ১৮৬৬ তে প্রকাশ পায় ' কপালকুণ্ডলা'। এই উপন্যাসটি উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর মেজদাদা সঞ্জীবচন্দ্রকে। চাকুরীরত অবস্থায় ১৮৬৭ তে আবার আইন কলেজে ভর্তি হন। ১৮৬৮ তে আবার ফিরে আসেন বারুইপুরে।
প্রস্তুতি নেন আইন পরীক্ষার। ১৮৬৯ এ আইন পরীক্ষায় পাশ করে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। এই একই বছরে 'মৃণালিনী' প্রকাশ পায়। পাশাপাশি ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর ১৮৭০ সালে ইংরেজি 'Buddhism and the Sankhya Philosophy' প্রকাশ হয়। এরপর ১৮৭২ সালে প্রকাশ পায় তাঁর সম্পাদিত ' বঙ্গদর্শন' পত্রিকা।
এর পাশাপাশি বহু বিবাহ, ব্রাহ্ম আন্দোলন, সমাজসংস্কার সহ নানান রকম আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৮৮২ সালে প্রকাশ পায়, তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস 'আনন্দমঠ'। এই উপন্যাসের “বন্দে মাতরম্” গানটি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক ভারতের জাতীয় স্তোত্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
এরপর ১৮৮৫ সালে ' ঈশ্বর গুপ্তের জীবনচরিত কৃতিত্ব' প্রকাশ পায়। এছাড়াও লিখেছেন, লোক রহস্য, দেবী চৌধুরানী, বিবিধ প্রবন্ধ, কমলাকান্ত, সীতারাম, মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত, কৃষ্ণ চরিত্র,ধর্ম্মতত্ত্ব ইত্যাদি। ‘দেবী চৌধুরাণী’ উপন্যাসে ব্রজেশ্বরের মায়ের চরিত্রটি তাঁর মা দূর্গাসুন্দরীর আদলে তৈরি করেছেন।
বঙ্কিমচন্দ্রের সব উপন্যাস ইংরেজি, জার্মান, হিন্দি, কানাড়া, তেলেগু প্রভৃতি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সন্তান
বঙ্কিমচন্দ্রের কোনো পুত্র সন্তান ছিলনা। তাঁর তিন কন্যা সন্তান ছিলেন শরৎকুমারী, নীলাজকুমারী ও উৎপলকুমারী। বড় মেয়ে শরৎকুমারীকে খুব ভালোবাসতেন বঙ্কিমচন্দ্র। আর তাই বড় জামাই রাখালচন্দ্রকে ‘প্রচার’ পত্রিকার সম্পাদনার ভার দিয়েছিলেন। শরৎকুমারীর ছেলেদের সাথে গড়ের মাঠে হাওয়া খেতে যেতেন।
শরৎকুমারীর ছেলে শুভেন্দুসুন্দরের সাথে বিবাহ হয় স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে কমলা দেবীর। তাঁর মেজ মেয়ে নীলাজকুমারীর সাথে বিয়ে হয়, উত্তরপাড়ার জমিদারবাড়ির ছেলে সুরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। আর ছোটো মেয়ে উৎপলকুমারীর বিয়ে হয়েছিল উত্তর কলকাতার এক ধনী পরিবারের ছেলে মতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
কিন্তু ছোটো মেয়ের সুখ টেকেনি। মতীন্দ্রনাথ ওষুধের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে উৎপলকুমারীরকে মেরে ফেলে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু
সাহিত্য, পড়াশোনা আবার কর্ম এসবের জন্য প্রবল পরিশ্রমের ফলাফলে বঙ্কিমচন্দ্রের শরীর ভেঙে পড়ে। ১৮৯৪ এর ৫ ই মার্চ হঠাৎ তিনি অজ্ঞান হয়ে যান, এরপর জ্ঞান ফিরলেও বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। আর তাই মাত্র ৫৬ বছর বয়সে ১৮৯৪ সালের ৮ এপ্রিল অকালে তিনি সকলকে ছেড়ে চলে যান।
উদয়ন মিত্রের লেখা ‘বঙ্কিম বসন্তে কালবেলা’ গ্রন্থে বঙ্কিমচন্দ্রের মৃত্যু বিবরণ রয়েছে । তিনি ছিলেন ডায়াবেটিক মানুষ। ডাক্তার বলেই দিয়েছিলেন, ডায়াবেটিস মানুষদের মদ্যপান করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, কিন্তু তিনি শোনেননি, আর তার ফলাফল মৃত্যু।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কর্মজীবনের তালিকা
তিনি ব্রিটিশ রাজের কর্মকর্তা ছিলেন। তাই বিভিন্ন প্রান্তে তাঁকে যেতে হত। নীচে রইল তালিকা।
- যশোর (বর্তমানে বাংলাদেশ) - ১৮৫৮
- নেগুয়া (মেদিনীপুর) - ১৮৬০ এর ফেব্রুয়ারি
- খুলনা (বর্তমানে বাংলাদেশ) - ১৮৬০ এর নভেম্বর
- বারুইপুর (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) - ১৮৬৪
- মুর্শিদাবাদ - ১৮৬৯ থেকে ১৮৭১
- কোলকাতা - ১৮৮১
- আলিপুর - ১৮৮২
- জাজপুর (কটক) - ১৮৮৩
- হাওড়া -১৮৮৩
- ঝিনাইদহ - ১৮৮৫
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস সমূহ
- 'দুর্গেশনন্দিনী'(১৮৬৫)
- 'কপালকুণ্ডলা'(১৮৬৬)
- 'মৃণালিনী'(১৮৬৯)
- 'বিষবৃক্ষ' (১৮৭৩)
- 'ইন্দিরা'(১৮৭৩)
- 'যুগলাঙ্গুরীয়' (১৮৭৪)
- 'রাধারাণী' (১৮৭৫)
- 'চন্দ্রশেখর' (১৮৭৫)
- 'রজনী' (১৮৭৭)
- 'কৃষ্ণকান্তের উইল' (১৮৭৮)
- 'রাজসিংহ' (১৮৮১)
- 'আনন্দমঠ' (১৮৮২)
- 'দেবী চৌধুরাণী' (১৮৮৪)
- 'সীতারাম' (১৮৮৭)
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ত্রয়ী উপন্যাস
- দেবী চৌধুরানী
- আনন্দমঠ
- সীতারাম
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ সমূহ
- ললিতা তথা মানস (১৮৫৬)
- লোক রহস্য (১৮৭৪)
- কমলাকান্তর দপ্তর (১৮৭৫)
- বিজ্ঞান রহস্য (১৮৭৫)
- কৃষ্ণচরিত ( ১৮৮৬)
- ধর্মতত্ত্ব (১৮৮৮)
- দেবতত্ত্ব (মরণোত্তর প্রকাশিত)
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উক্তি
“পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ’”।
'তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেনো'।
'স্ত্রীলোকদিগের উপর যেমন কঠিন শাসন, পুরুষের উপর তেমন কিছু নেই। কথায় কিছু হয় না, ভ্রষ্ট পুরুষের কোন সামাজিক দণ্ড নেই। একজন স্ত্রী সতীত্ব সম্বন্ধে কোন দোষ করিলে সে আর মুখ দেখাইতে পারে না। হয়তো আত্মীয় স্বজন তাকে বিষ প্রদান করেন, আর একজন পুরুষ প্রকাশ্যে সেই সব কাজ করিয়া রোশনাই করিয়া জুড়ি হাকাইয়া রাত্রিশেষে পত্নীকে চরণরেণু স্পর্শ করাইয়া আসেন, পত্নী পুলকিত হয়েন'।
'যাকে ভালবাসো তাকে চোখের আড়াল করো না'।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে অজানা তথ্য
- বঙ্কিমচন্দ্রের বাসস্থান সংস্কারের পর তৈরি হয়েছে বঙ্কিম ভবন। সেখানে রয়েছে একটি সংগ্রহশালা একটি হলঘর। সেখানে রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত লেখার টেবিল ও চেয়ার।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের তীব্র সমালোচক ছিলেন। বিদ্যাসাগরের প্রতি এতটাই তিনি সমালোচক, শেষ পর্যন্ত বিদ্যাসাগর বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের নীচে তাঁর স্থান।
- দ্বিতীয় স্ত্রী রাজলক্ষী ছিলেন তাঁর বন্ধু, তাঁর সঙ্গীনি। কিন্তু অবচেতনে ছিলেন প্রথম স্ত্রী মোহিনীদেবী। আর তাই তো মৃত্যুর আগেও রোগশয্যায় শুয়ে বলেছিলেন, ' মোহিনী! মোহিনী! আমি এবার তার কাছে যাব'।
- শৈশব জীবনে বঙ্কিমচন্দ্রের খেলার নেশা ছিলনা, ছিলনা খেলা দেখার নেশা। বরং ছিল তাস খেলার নেশা। তাই স্কুল ছুটির পর বন্ধুদের নিয়ে তাস খেলতেন।
- বঙ্কিমচন্দ্র আনন্দমঠ উপন্যাস লেখার আগেই লিখেছিলেন ' বন্দেমাতরম'। আসলে লেখার সময় ম্যাটার কম পড়ত, আর তাই পাতা ভরানোর জন্য গানটি সংযোগ করেছিলেন।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষ জীবনটা কেটেছিল, এই কলেজ স্ট্রিটেই। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উলটো দিকে প্রতাপ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে থেকে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেন। বর্তমানে সেই ভগ্নপ্রায় বাড়ি ভেঙে করা হয়েছে বঙ্কিমচন্দ্র স্মৃতি গ্রন্থাগার। ২০০৬ সালে এটির উদবোধন হয়।
- আফিম মেখে ঢুলু ঢুলু চোখে লিখে ফেলতেন বঙ্গদর্শনের পাতা।
- বঙ্কিমচন্দ্র রোদ সহ্য করতে পারতেন না , তাই কোথাও যাওয়ার হলে, ভোরবেলা বেড়াতেন, নয়ত বিকেলবেলা।
- ১৮৯১ সালে বঙ্কিমচন্দ্র পেয়েছিলেন রায় বাহাদুর খেতাব।
- নবীনচন্দ্র দাসের কাছে তিনি ইংরেজি শেখেন। সংস্কৃত ও গণিত শাস্ত্রে বিশেষ দক্ষতা ছিল।
- বঙ্কিমচন্দ্র শুধু ঔপন্যাসিক নন, তিনি গীতার ব্যাখ্যাদাতা , সাহিত্য সমালোচক হিসাবেও দেশে দেশে জনপ্রিয়।
- বঙ্কিমচন্দ্র বাংলা ভাষাকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে এসেছিলেন, আর তাই তাঁর রচনা ‘বঙ্কিমী শৈলী’ বা ‘বঙ্কিমী রীতি’ নামে পরিচিত।
- বঙ্কিমচন্দ্রের ভালোবাসার উক্তি তাঁর প্রেয়সীর জন্য:- ” তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সে কি মোর অপরাধ ?চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিনী, বলে না তো কিছু চাঁদ । ”
- অনেকের মতে বাংলাসাহিত্যের প্রথম সার্থক রোমান্টিক উপন্যাস ' কপালকুণ্ডলা'।
- বেগম রোকেয়ার আগে পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের একমাত্র নারীবাদী লেখক ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।