বঙ্গবন্ধু জীবনী - শেখ মুজিবুর রহমান Bangabandhu Biography in Bengali

Bangabandhu Biography in Bengali

বঙ্গবন্ধুর জীবনী (Bangabandhu): বঙ্গবন্ধু অর্থাৎ বাংলার বন্ধু। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি তিনি। তাঁর সাথে জড়িয়ে আছে গোটা বাংলাদেশ। তাঁর জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন। তাঁর জন্য জন্ম হয়েছে বাংলাদেশের। আসুন জেনে নেওয়া যাক, সেই মানুষটার সংক্ষিপ্ত জীবনী। 

যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান,
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান
দিকে দিকে আজ অশ্রুমালা রক্তগঙ্গা বহমান,
তবু নাই ভয় হবে হবে জয়, জয় মুজিবুর রহমান।

- অন্নদাশঙ্কর রায়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনী রচনা

জন্ম ১৭ই মার্চ ১৯২০।
জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ মহকুমা, ফরিদপুর জেলা, বাংলাদেশ।
মাতা ও পিতা সায়েরা খাতুন ও শেখ লুৎফুর রহমান।
মৃত্যু ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ (৫৫)
মৃত্যু স্থান নিজস্ব বাসভবন, ৩২ নং সড়ক, ধানমন্ডি, ঢাকা, বাংলাদেশ।
মৃত্যুর কারণ গুপ্তহত্যা।
জাতীয়তা বাংলাদেশী।
রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (১৯৭৫), নিখিল ভারত মুসলিম লীগ (১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে), আওয়ামী লীগ (১৯৪৯–১৯৭৫)।
দাম্পত্য সঙ্গী বেগম ফজিলাতুন্নেসা।
সন্তান শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা, শেখ রাসেল।
পুরস্কার জুলিও ক্যুরি শান্তি পুরস্কার (১৯৭৩) স্বাধীনতা পুরস্কার (২০০৩) গান্ধী শান্তি পুরস্কার (২০২০)

জন্ম

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (Sheikh Mujibur Rahman)। জন্ম প্রসঙ্গে মেয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, “আমার আব্বার শৈশব কেটেছিল টুঙ্গিপাড়ার নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মেঠো পথের ধুলোবালি মেখে। বর্ষার কাদাপানিতে ভিজে ”

পিতা ও মাতা

শেখ লুৎফর রহমান ও মোসাম্মৎ সাহারা খাতুনের তৃতীয় সন্তান হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাবা-মা ভালোবেসে তাঁকে খোকা বলে ডাকতেন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। 

পড়াশোনা

১৯২৭ সালে  গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন মাত্র ৭ বছর বয়সে । এরপর ভর্তি হন গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে, তখন বয়স মাত্র নয়। কিন্তু ১৪ বছর বয়সে ঘটে গেল এক বিপর্যয়। তিনি বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন। আর তাই লেখাপড়ায় বিরতি নিতে হয়। চার বছর পর ১৯৩৭ সালে আবার পড়াশোনায় মন দেন।

এরপর ১৯৪২ এ এস.এস.সি পাস করে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে মানবিক বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে ভর্তি হন। এরপর এই কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। ভারত ও পাকিস্তান ভাগ হয়ে যাওয়ার পর, চলে আসেন পাকিস্তানে এরপর ১৯৪৮ এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।

দাম্পত্য জীবন

১৯৩৮ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে বেগম ফজিলাতুন্নেছাকে বিয়ে করেন। এরপর তাঁরা পাঁচ সন্তানের জন্ম দেন। শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল। 

কর্মজীবন

পড়াশোনা করতে করতেই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৬ এ ইসলামিয়া কলেজে জিএস নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৪০ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠনে যোগ দেন । এরপর ১৯৪৩ এ উদারপন্থী ও প্রগতিশীল সংগঠন বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দেন ।

১৯৪৮ এর ২৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উর্দুকে পাকিস্থানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে তিনি প্রতিবাদ করেন। এর কারণে ১৯৪৮ এর ১১ ই মার্চ কারাগারে বন্দী হন। তার পরের দিন আবার মুক্তি পেয়ে যান। এরপর তৎকালীন সরকার একটা প্রথা চালু করেছিল, যেখানে বলা হয়, এক জেলা থেকে অন্য জেলায় কোনো খাদ্য যেতে দেওয়া হবেনা।

এই প্রথার নাম কর্ডন প্রথা। বঙ্গবন্ধু এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, আর তাই ১৯৪৮ এর ১১ সেপ্টেম্বর আবার কারাগারে বন্দী হন। এরপর ১৯৪৯ এর ২১ জানুয়ারী মুক্তি পান। এই সময় থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠলেন দক্ষ রাজনৈতিক নেতা। এই সময় মুসলিম লীগ ছেড়ে গঠন করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ।

এরপরই ১৯৫৪ তে  বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রী হন। এরপর ১৯৫৬ তে মন্ত্রিসভায় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ১৯৫৭ সালে ৩০ মে এই পরিষদ ত্যাগ করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে থাকেন। ১৯৬৩ তে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয়।

এরপর ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। তিনি বলেন, “একসময় এদেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকু ও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে। একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া আর কোন কিছুর নামের সঙ্গে ‘বাংলা’ কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই।

জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি- আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধুমাত্র বাংলাদেশ”। ১৯৭১ এ স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তিনি বলেন, “একসময় এদেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে

বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে। একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া আর কোন কিছুর নামের সঙ্গে ‘বাংলা’ কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই। জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি- আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধুমাত্র বাংলাদেশ”।

এক সাগর রক্তের বিনিময়ের ফসল বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশে গরিব-দুঃখীসহ তার সাড়ে সাত কোটি মানুষ যাতে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে, সেই ব্যবস্থাও করেছেন। এরপর আসে সেই ভয়ানক দিন। রাতের অন্ধকারে বাঙালীদের উপর ঝাপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি সেনারা। বৃদ্ধ থেকে কোলের শিশু কেউ রক্ষা পায়না।

১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ গ্রেফতার করা হয়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এবার পাক সেনাদের প্রতিহত করার পালা। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে ৩০ লক্ষ বাঙ্গালীর প্রাণের বিনিময়ে আসে শান্তি। তৈরি হয় নতুন দেশ।

১০ ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে নতুন সংবিধান রচনায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ গণপরিষদ আদেশ জারি হয়, এরপর ১০ এপ্রিল ১৯৭২ এ গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন হয়। ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট সংবিধান কমিটি গঠন করা হয় । ১২ অক্টোবর ১৯৭২ সালে খসড়া গণপরিষদে উত্থাপন করেন। এরপর ৪ নভেম্বর ১৯৭২ গৃহীত হয়।

আর তাই বাংলাদেশে ৪ নভেম্বর সংবিধান দিবস পালন করা হয়। এই সংবিধান এ রয়েছে একটি প্রস্তাবনা, ১১টি ভাগ, ১৫৩টি অনুচ্ছেদ এবং ৭টি তফসিল রয়েছে। সকল রাজনৈতিক দলকে একত্র করতে ১৯৭৪ এ তৈরি করেন, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা ‘বাকশাল'।

সমস্ত দেশ যখন সব কিছু সামলে নতুন করে বাঁচার আশা খুঁজে পাচ্ছে। তখনই নেমে এল ভয়াবহ অন্ধকার। 

মৃত্যু

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে। ওই সময় দেশের বাইরে ছিলেন তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এই দুজন তাই বেঁচে যান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'প্রাণে বেঁচে যান দুই কন্যা ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে জার্মানিতে আসার কারণে।

তাঁরা কীভাবে, কোথায় ছিলেন, কারাই-বা সেই রুদ্ধশ্বাস সময়ে বিপদের সাথি হয়েছিলেন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংবাদপত্র, জার্মানির সেই সময়কার রাজনীতিক বা জার্মানরা বিষয়টি কীভাবে দেখেছিলেন, এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে থাকি। নতুন প্রজন্ম ও গবেষকদের কাছে সেসব তুলে ধরার তাগাদা অনুভব করি।'

উল্লেখযোগ্য তথ্য

  1. কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ, যেখানে মুজিবুর রহমান পড়াশোনা করেছেন, সেটার বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ।
  2. এই কলেজে পড়াশোনার সময় কলকাতার যে হোস্টেলে থাকতেন, সেখানে এখন জাদুঘর করা হয়েছে।
  3. শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনা, যিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। 
  4. ১৭ ই মার্চ তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে সারাদেশে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয় ।
  5. শেখ মুজিবুর রহমান দক্ষ ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। 

প্রশ্নোত্তর

শেখ মুজিবুর রহমান নামটি কে রাখেন?

তাঁর নানা শেখ আব্দুল মজিদ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবে দ্বিতীয় বিপ্লব ঘোষণা করেন?

১৯৭৫ সালের ২৫ শে জানুয়ারি।

শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন কত সালে?

১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ কোথায় অবস্থিত?

বাংলাদেশের ফরিদপুরে।

বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বিভাগের ছাত্র ছিলেন?

বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন।

মুজিবুর রহমানের জন্ম কবে?

১৭ই মার্চ ১৯২০।

মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান?

টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ মহকুমা, ফরিদপুর জেলা, বাংলাদেশ।

মুজিবুর রহমানের পিতা ও মাতার নাম কী?

শেখ লুৎফুর রহমান ও সায়েরা খাতুন।

শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রীর নাম কী?

বেগম ফজিলাতুন্নেসা।

মুজিবুর রহমানের মৃত্যু কবে?

১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ (৫৫)।

... ...

এখানে বর্ণিত হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের (Sheikh Mujibur Rahman) সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। তাঁর জীবন সম্পর্কে জানতে হলে পড়তে হবে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখিত আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। এরপর রয়েছে আত্মজীবনী মূলক দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘কারাগারের রোজনামচা’।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url